পৃথিবীতে বাবা-মায়ের বিকল্প মেলানো সম্ভব নয়। এই পৃথিবীতে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা একমাত্র বাবা-মায়ের কাছেই পাওয়া যায়। কিন্তু সেই বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানদের নিষ্ঠুর আচরণ কাম্য নয়। ছোট থেকে লালন-পালন করে বড় করলেন, যে বাবা নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে ৫০০ টাকা বেতনের গ্রাম পুলিশের চাকরি করে সন্তানদের মানুষ করেছেন, সেই বাবা-মা আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ভিক্ষা করছেন। পেটের জ্বালা মেটাতে দিনের পর দিন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচবিবি উপজেলার বারকান্দ্রী গ্রামের চৌকিদার লিপেন মালির কথা। পাঁচবিবি উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদে দীর্ঘ ২৫ বছর গ্রাম পুলিশের চাকরি করে তিনি তিন মেয়ে ও দুই ছেলেকে লালন-পালন করেন। এখন সেই ছেলেমেয়েরা কেউ বাবা-মায়ের খোঁজ নেন না। অনেকদিন যাবৎ নানা রোগে ভুগছেন তিনি ও তার স্ত্রী। প্রতিদিন ঔষধ কিনতে হয় তাদের। বয়স্ক ভাতা ছাড়া আর কোনো সরকারি সুবিধা পান না। যে সরকারি ঘরটিতে আছেন, সেটাও তার ছোট ছেলের নামে—যে কোনো সময় রাস্তায় থাকতে হতে পারে তাদের।
লিপেন মালি বলেন, “আমি ২৫ বছর ইউনিয়নের মানুষকে সেবা দিয়ে নিজের জীবন বিলীন করলাম, আর আজ আমি অসহায়। আমার পরিবার ভিক্ষার টাকায় চলে, আমাকে দেখার মতো কেউ নেই।”
তিনি আরও বলেন, “যে বয়সে ছেলে-ছেলে বউয়ের সেবা-যত্ন, নাতি-নাতনির ভালোবাসা, নাতি-নাতনিদের নিয়ে আনন্দ-উল্লাসে মেতে থাকার কথা, সেই বয়সে ভিক্ষা করতে হচ্ছে আমাদের।”
এলাকাবাসী জানান, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে চাকরি করেছেন লিপেন মালি। চাকরি শেষে বেকার জীবনে খেয়ে না খেয়ে চলছে পরিবার। লিপেনের চিকিৎসা ও সংসার খরচ জোগাতে ভিক্ষার রাস্তা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে তার পরিবার।
জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ উপজেলার বিত্তবানরা তার পরিবারটিকে সুদৃষ্টি দেবেন বলে আশা রাখেন এলাকাবাসী।
মন্তব্য করুন