মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পুলিশের ভয়ে পশ্চিম ভাড়াউড়া গ্রাম প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রামের সকল মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, কেউ জানে না কখন পুলিশ এসে তাদের ধরে নিয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, বিএনপি নেতা ও সাবেক মেয়র মহসিন মিয়া মধুর সাথে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালকদের সংঘর্ষের ঘটনায় চাপক্ষোভ বিরাজ করছে অটোচালক ও ভাড়াউড়া গ্রামবাসীর মধ্যে। শ্রীমঙ্গল থানার এসআই অলক বিহারী গুণ বাদী হয়ে থানায় ৩৮ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২৮০/২৮৫ জনকে আসামী করে পুলিশ অ্যাসল্ট মামলা দায়ের করেছেন। প্রায় প্রতিদিন দিনেও রাতে পুলিশের লোকজন গ্রামে টহল ও নজরদারি বৃদ্ধি করায় ঈদের রাত থেকেই পুরুষশূন্য গ্রামবাসী।
অন্যদিকে, নতুন করে আলাউদ্দিন নামে একজন বাদি হয়ে ৬ এপ্রিল ৫৪ জনকে আসামি করে একটি লুটপাটের মামলা দিয়েছেন পশ্চিম ভাড়াউড়া গ্রামের লোকজনের বিরুদ্ধে।
পুলিশ, অটোরিকশা চালক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঈদের আগের দিন রাত (৩০ মার্চ) প্রায় সাড়ে ১০টার দিকে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক মেয়র মহসিন মিয়া মধু শহরের গদারবাজারে তার পরিচালিত বিনালাভের বাজারে আসেন। এসময় অটোরিকশা পার্কিং নিয়ে চালকদের সাথে মধুর বাকবিতণ্ডা হয়। এর জেরে মধুর লোকজন ও অটোরিকশা চালকদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এসময় ২০/২৫টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (টমটম) ভাঙচুর করা হয়। চালকদের দাবি, মহসিন মিয়া মধুর লোকজন তাদের ওপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে ও তাদের ২৫টির মতো গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় অটোচালকদের আত্মীয়স্বজনসহ গ্রামের কিছু লোক শহর সন্নিকটস্থ পশ্চিমভাড়াউড়া গ্রাম থেকে লাটিসোটা নিয়ে শহরে আসেন। পরে শহরের চৌমোহনায় দুইগ্রুপের মুখোমুখি অবস্থান নেয়। তাদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ ৫৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। পরে ঘটনাস্থলে যৌথবাহিনী পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং শহরের ডাকবাংলা এলাকায় বিএনপি নেতা মহসিন মিয়া মধুর বাসভবন মহসিন নিবাসে অভিযান চালিয়ে দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে। এসময় যৌথবাহিনীর সদস্যরা মধুসহ ১৩ জনকে আটক করেন অপরদিকে পশ্চিমভাড়াউড়া গ্রাম থেকে কামরুল ইসলাম হৃদয় নামের এক যুবককেও আটক করা হয়। পরদিন ৩১ মার্চ শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের মাধ্যমে আসামীদের জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
পশ্চিম ভাড়াউড়া গ্রামের মো. আমান মিয়া জানান, পুলিশের করা মামলার ভয়ে ঈদের রাত থেকে তিনি গ্রাম ছাড়া আছেন। গ্রামের শিশুকিশোর ও বৃদ্ধ নারীদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক লেগে আছে। এছাড়া, কোন পুরুষই আর গ্রামে অবস্থান করছেন না বলে জানান। এই মামলার ফলে নিরীহ ভিকটিমরা আবারও ভিকটিম হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম জানান, পুলিশের কর্তব্যকাজে বাঁধা, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় একটি পুলিশ অ্যাসল্ট মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ৬ এপ্রিল আলাউদ্দিন নামে একজন পশ্চিম ভাড়াউড়া গ্রামের ৫৪ জনকে আসামি করে নতুন একটি মামলা করা হয়েছে। এছাড়া, আকলিমা নামের এক নারীর মহসিন মিয়া মধুকে আসামি করে একটি মামলা করেছে; এই মামলায় মহসিন মিয়া মধুসহ আসামিরা জামিনে আছেন। তিনি আরো জানান, টমটম চালকদের পক্ষে থেকে মহসিন মিয়া মধুকে আসামি করে আরো ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন