ঢাকা , শনিবার, ২০২৫ এপ্রিল ১২, ২৯ চৈত্র ১৪৩১
#

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ফসলি জমি, সরকারি জায়গা ও পাহাড় কাটার মাধ্যমে অবৈধ মাটি পাচার

জাহেদুল আলম জাহিদ, হাটহাজারী প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম।
প্রকাশিত : রবিবার, ২০২৫ ফেব্রুয়ারী ২৩, ০৪:২২ অপরাহ্ন
#

হাটহাজারী পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষিজমি, সরকারি খাসজমি, পাহাড়, ছড়ার পাড়ের মাটি কেটে নিয়ে অবৈধভাবে বিক্রি করছে কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র। রাতের আঁধারে ট্রাকের মাধ্যমে এই মাটি পাচার করা হচ্ছে ইটভাটা ও নির্মাণকাজ এবং পুকুর জলাশয়, সড়কের পাশের সরকারি (সওজ'র) জায়গা, ফসলি জমি ভরাট কাজে। এতে একদিকে যেমন কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, তেমনি পরিবেশগত বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই এ চক্রের তৎপরতা দিন দিন বেড়েই চলছে। যার ফলে আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে গোচারণ ভূমি, পুকুর জলাশয়, বীজতলা ও কৃষি জমি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছে একাধিক চক্র। আর প্রতি বছরের তুলনায় এবারের শীতে ও শুষ্ক মৌসুমি মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে মাত্রার বাইরে। বিশেষ করে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে মাটির ব্যবসা চলছে। কোনো ধরনের আইনের তোয়াক্কা না করে অবাধে বিক্রি হচ্ছে পাহাড় কাটা মাটি এবং কৃষি জমির টপসয়েল। অবৈধ মাটি ব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যুদের পুকুর জলাশয় কৃষি জমি ভরাট এবং পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করে যাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন নিজেই এমন অভিযোগ প্রায় সবার।

হাটহাজারী পৌরসভার ফটিকা এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী আবদুল সালাম তাওহিদ বলেন, সারারাত ধরে ড্রাম ট্রাকের শব্দে অতিষ্ট হয়ে উঠেছি। প্রতিদিন রাত ১২টার পর থেকে এ ড্রাম ট্রাকের উৎপাত শুরু হয়। চলে সকাল পর্যন্ত। 'কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে হুমকি দেয়।' প্রশাসনকে জানালে তারা কোনো ব্যবস্থা নেন না।

ওই এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা যেনো একটা মঘের মুল্লুকে ফিরে এসেছি। প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ লোকজন এসব অবৈধ কাজে জড়িত। ৫ অগাস্টের পূর্বে যারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসরদের চামচামি আর অপকর্ম করে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গিয়েছিল উপজেলা প্রশাসনের লোকজনের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় এখনো তারাই সব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে দাপটের সাথে। কেউ মসজিদের আবার কেউ কবরস্থানের নাম ব্যবহার করে কৃষি জমির টপসয়েল কেটে কৃষি জমি ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠে পড়েছে তারা।

শায়েস্তা খাঁ পাড়ার একাধিক ব্যক্তি জানান, গত কয়েকদিন ধরে গভীর রাত ১ টার পর থেকে ড্রাম ট্রাকের শব্দে ঘুমাতে কষ্ট হচ্ছিল। উপজেলা প্রশাসনকে জানালে তারা ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে পর দিন সকালে ঘটনাস্থলে লোক পাঠিয়ে প্রশাসনের উপস্থিতি জানিয়ে আসেন। সেদিন আর গভীর রাতে চুপিসারে মাটির ট্রাক চালাতে হয়নি, সেদিন সন্ধ্যা থেকেই প্রকাশ্যে মাটির ট্রাক চলাচল শুরু করে। পরে প্রশাসনকে ঘটনা জানাতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও প্রশাসন সে চেষ্টা কোনো গুরুত্বই দেয়নি। পরে বুঝলাম তারা সবাই ম্যানেজ হয়ে গেছে। এভাবেই চলছে সব।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনকারী সদস্য মানবাধিকারকর্মী একরামুল হক চৌধুরী বলেন, এভাবে অবৈধভাবে মাটি কাটায় মাটির উপরিভাগে থাকা পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়, ফলে ভবিষ্যতে ওই জমিতে চাষ করা কঠিন হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে জমির মাটি কেটে নেওয়ার ফলে মাটির জলধারণ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে পানি সংকটের কারণ হতে পারে, এছাড়াও বিভিন্ন কীটপতঙ্গ ও মাইক্রোঅর্গানিজমের আবাসস্থল নষ্ট হয়ে মাটির প্রাকৃতিক গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে। আইনে উল্লেখ আছে, নিজের জমি থেকেও কেউ মাটি কেটে বিক্রি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

হাটহাজারী রেঞ্জ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের কাছে পাহাড় কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বন বিভাগের আওতাধীন কোনো স্থানে যদি পাহাড় কাটা হয়, সে ক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা বা ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবো। আর এর বাইরে হলে সেটা পরিবেশ অধিদপ্তর এবং উপজেলা প্রশাসন দেখবেন। বন বিভাগের ভূমির মধ্যে কোথাও পাহাড় কাটার খবর পেলে আমরা সে ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিবো। এ ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতেও বলেন তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে সহকারী কমিশনার ভূমি লুৎফর নাহার শারমিনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বিষয়টি নিয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম মশিউজ্জামান জানান, মাটি কাটা চক্রকে সহযোগিতার প্রশ্নই আসে না। আমরা প্রায় সময় টপসয়েল কাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি, জরিমানা করছি, স্কেবেটরের ব্যাটারি জব্দ করছি। গত সোমবার গভীর রাতেও অভিযানে গিয়ে পাহাড়ি মাটি ও টপসয়েল দিয়ে জায়গা ভরাট করা বন্ধ করেছি। পাহাড় ও টপসয়েল কাটার ব্যাপারে কোনো ছাড় নাই।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video