ঢাকা , বুধবার, ২০২৫ এপ্রিল ১৬, ২ বৈশাখ ১৪৩২
#

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বাঁশখালীতে নির্মমভাবে হত্যা বন্যহাতির, দাঁত ও শুঁড় কেটে নেওয়ার অভিযোগ

মোঃ দিদার হোসাইন, বাঁশখালী প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম।
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২০২৫ এপ্রিল ১০, ০৪:৫৪ অপরাহ্ন
#

বাঁশখালীতে এক বন্যহাতি হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরেজমিনে নিহত হাতিটির দাঁত এবং পায়ের খুঁড়ি কেটে নেওয়া, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মাথা থেকে শুড় আলাদা করাসহ হাতিটির শরীরে উপর্যুপরি আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। বনকর্তাদের অবহেলায় প্রায় হাতিশূন্যের পথে বাঁশখালীর পাহাড়ি অঞ্চল, বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দস্যুচক্র—এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

বুধবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার ৭ নম্বর সরল ইউনিয়নের পাইরাং পূর্ব জঙ্গল গভীর পাহাড়ি অঞ্চলের লিচু বাগান সংলগ্ন মনুমারঝিরী এলাকায় স্থানীয়রা হাতিটির মৃতদেহ দেখতে পেয়ে লোকমুখে বলাবলি করায় হাতির মৃত্যুর খবরটি ছড়িয়ে পড়ে।

সরেজমিনে পরিদর্শনকালে স্থানীয়রা জানান, ৪/৫ দিন আগে রাতের আঁধারে হাতিটি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছিল, মানুষের ধান, ক্ষেতখোলা ও অনেক গাছ-গাছালি নষ্ট করেছিল। বিষয়টি বন বিভাগের লোকজনও দেখেছে। পরে সকালে স্থানীয় লোকজনের তাড়ায় হাতিটি পাহাড়ের দিকে চলে যায়। কিন্তু বুধবার হাতিটির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ায় নিহত হাতিটি দেখতে স্থানীয় লোকজন গভীর অভয়ারণ্যে ভিড় জমাতে দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাঁশখালীর পাহাড়ি এলাকায় মানুষের বিচরণ ব্যাপক হারে বেড়েছে। শত শত অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠার ফলে বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থল এখন মানুষের বসবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। এতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বন্যপ্রাণীদের ওপর। বন্যহাতির পাল প্রতিনিয়তই লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। ক্ষেতখোলা, ধানক্ষেত ও গাছপালা নষ্ট করাসহ মানুষের জানমালের ক্ষতিসাধনের কারণে হাতির প্রতি মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। বন বিভাগের অবহেলায় বন্যহাতিগুলো মানুষের টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। আর বনকর্তাদের হাত ধরে পাহাড়ে ওইসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। অবৈধ স্থাপনা ও মানুষের ব্যাপক বিচরণে চরমভাবে অনিরাপদ হয়ে উঠেছে বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থল। এতে খাদ্যাভাবে বন্যহাতিরা খাবারের খোঁজে প্রতিনিয়তই লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। বন বিভাগের লোকজন টাকার বিনিময়ে সরকারি জায়গা অবৈধভাবে দখল দিয়ে শত শত অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ করে দিচ্ছে বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। বন্যহাতি লোকালয়ে ঢুকে মানুষের ক্ষেতখোলা ক্ষতিসাধনের কারণে একদিকে হাতির প্রতি মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে, অপরদিকে হাতি হত্যায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দুর্বৃত্তরা—এমন ধারণা সচেতন মহলের।

জলদি রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, হাতির মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা সেখানে গিয়ে দেখেছি। হাতিটি স্ট্রোক করে মারা গেছে বলে ধারণা করছেন তিনি। তবে স্ট্রোক করে মৃত্যু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলেন কীভাবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ধারণা করা হচ্ছে আর কি।” স্ট্রোকে মৃত্যু হলে হাতিটির মাথায় বড় ধরনের আঘাতের চিহ্ন কীভাবে হলো? আর হাতিটির দাঁত এবং পায়ের খুঁড়ি কাটল কারা? এমন প্রশ্নের জবাবে আমতা আমতা করে বনকর্তা শাহ আলম বলেন, “হাতিটিকে হত্যা করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” ময়নাতদন্ত করে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে এবং নিহত হাতিটিকে মাটি চাপা দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “আমি বাঁশখালীতে যোগদান করেছি মাত্র ২/৩ মাস হয়েছে। আমার আগে যারা দায়িত্বে ছিলেন হয়তো অবৈধ স্থাপনাগুলো তাদের আমলেই করা হয়েছে।”

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video