ঢাকা , সোমবার, ২০২৪ Jun ২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১
#

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সাংবাদিক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে করা চসিকের বরখাস্ত কাউন্সিলরের দায়ের করা ডিজিটাল সিকিউরিটির মামলা খারিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২০২৪ মে ৩০, ০৮:২৫ অপরাহ্ন
#

চট্টগ্রাম নগরে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে দায়ের করা হয়রানিমূলক ও মিথ্যা একটি মামলা আদালত খারিজ করে দিয়েছে। মামলাটি করেছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বহুল বিতর্কিত কাউন্সিলর (বর্তমানে সাময়িক বরখাস্তকৃত) জহুরুল আলম জসিম। ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি তিনি এই মামলাটি করেছিলেন। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিই) মামলাটি (৫৪/২০২৩) তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় অভিযুক্ত ৪ আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করে। মামলার ফরেনসিক প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জহিরুল কবির মামলাটি নথিজাত করার আদেশ দেন।

মামলায় আসামি করা হয়েছিল দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার সহ-সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম খান, তাঁর স্ত্রী সায়মা আকতার জেরিন (এমবিএ), দৈনিক শাহ আমানত ও দৈনিক চট্টগ্রামের পাতার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির ও আকবরশাহ থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাবুদ্দিন জায়েদ।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী।

জানা গেছে, আকবরশাহ এলাকায় ব্যাপকভাবে পাহাড় কাটার অসংখ্য অভিযোগ ও মামলা রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিতর্কিত কাউন্সিলর (বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত) জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে। তার এসব পাহাড় কাটার তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সরবরাহ ও গণমাধ্যমকে জানানোর কারণে ওই কাউন্সিলরের রোষাণলে পড়েন সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম খান। পথের কাটা সরাতে জহুরুল জসিম এই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ধর্ষণ চেষ্টা ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে একের পর এক হয়রানিমূলক মামলা দিতে থাকে। প্রতিটি মামলায় আইনী লড়াই শেষে তিনি অব্যাহতি পান। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি নতুন করে আরো একটি মামলা দায়ের করে জহুরুল আলম জসিম। সেই মামলায় আসামি করা হয় সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম খান ও তার স্ত্রীসহ মোট ৪ জনকে। তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সিআইডির সহযোগিতা নিয়ে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় আসামিদের অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করে আদালতে গত নভেম্বর মাসে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর বাদী জহুরুল আলম জসিম তার আইনজীবীর মাধ্যমে কয়েকদফা নারাজি দিতে ব্যর্থ হয়।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (৩০ মে) মামলার নারাজি শুনানীর তারিখ ধার্য ছিল। বাদী আদালতে তৃতীয়বারের মতো সময় প্রার্থনার আবেদন করে। আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে মামলা নথিজাত (খারিজ) করার আদেশ দেন।

এই বিষয়ে সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম খান জানান, সাংবাদিকদের দমনে অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রকদের একটাই হাতিয়ার তা হচ্ছে চাঁদাবাজি ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা করা। এভাবেই সাংবাদিকদের হয়রানি করা হয়ে থাকে দমন করতে। আমার বিরুদ্ধেও তাই হয়েছে। আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। শুনেছি আদালত মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন। সার্টিফায়েড কপি না পাওয়া পর্যন্ত এই বিষয়ে কথা বলাটা সমুচিন নয়। 

দৈনিক আজকের পত্রিকার চট্টগ্রাম প্রধান ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ জানান, আমাদের ইউনিয়নের মেম্বার ও আমাদের সহকর্মী শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি হয়রানিমূলক মামলা করা হয়। শুধু জহুরুল আলম জসিম বাদী হয়ে ২টি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা করেন। অন্যদের দিয়ে করানো হয় আরো ২টি মামলা। সবগুলো মামলাতেই শফিকুল নির্দোষ বলে প্রমাণিত হন। সর্বশেষ মামলাটি খারিজ হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে এটির অবসান হলো। আমরা সাংবাদিক সমাজ ডিজিটাল

সিকিউরিটি অ্যাক্টে ব্যাপকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। প্রভাবশালী অপরাধীরা এর সুযোগ নিচ্ছে। শফিকের বিষয়টিও তাই। আমরা এই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করছি।

মামলার শুনানীর সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. জামাল উদ্দিন জানান, মামলাটির ৩য় দফায় নারাজি শুনানী ছিল। বাদী পক্ষ আবারও সময় চেয়েছিল। পুলিশ সাইবার ক্রাইম ইউনিটের প্রতিবেদনে অভিযোগের সাথে আসামিদের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতি দানের সুপারিশ ছিল। আদালত তাই মামলাটি খারিজ করে নথিজাত করার আদেশ দেন।   

চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাইবার মামলাটির আজকে নারাজি শুনানী ছিল। পর পর ২ বার নারাজি দিতে ব্যর্থতা এবং তৃতীয় দফায়ও বাদী পক্ষের সময় চাওয়া ও মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করে তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদনসহ সার্বিক বিবেচনায় আদালত মামলাটি খারিজ (নথিজাত) করে দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থবিত্তের মালিক হওয়া, আকবরশাহ এলাকায় পাহাড় কেটে সাবাড় করা, সরকারি সম্পত্তি দখল, বিক্রি ও ভাড়া-লাগিয়ত, সাধারণ মানুষের সম্পত্তি দখল, এলাকায় মাদক, চাঁদাবাজি, দেহ ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষকতাসহ এলাকায় কিশোর গ্যাং পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সিএমপির বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা, সিএমপির পশ্চিম বিভাগে অসংখ্য অভিযোগ ও জিডি রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত বছরের ২৬ জানুয়ারি পরিবেশ সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ সাংবাদিক ও পরিবেশ কর্মীরা আকবরশাহ'য় পাহাড় কাটা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গেলে তাদের উপর হামলা চালায় জহুরুল আলম জসিমসহ তার বাহিনী। এই ঘটনায় আকবরশাহ থানায় জহুরুল আলম জসিমকে প্রধান আসামি করে রিজওয়ানা হাসান বাদী হয়ে আকবরশাহ থানায় মামলা করেন। পুলিশ ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে জানিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর জসিমসহ অপরাপর আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার আইন অনুসারে গত ২৪ জানুয়ারি জহুরুল আলম জসিমকে কাউন্সিলর পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তার এই বরখাস্তের আদেশ এখনো বহাল আছে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video