ঢাকা , সোমবার, ২০২৪ Jun ২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১
#

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

শঙ্খ নদীর ভাঙ্গনে ঝুঁকিতে পুকুরিয়ার ৫ শতাধিক পরিবার

বাঁশখালী প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত : বুধবার, ২০২৪ মে ২৯, ০৬:২৬ অপরাহ্ন
#

শঙ্খ নদীর ভাঙ্গন রোধ করা যাচ্ছেনা চট্টগ্রামের বাঁশখালী পুকুরিয়া ইউনিয়নের তেইচ্ছিপাড়া, খন্দকার পাড়া ও পূর্ব পুকুরিয়া এলাকায়, এতে ওই এলাকায় বসবাসরত অন্তত ৫শতাধিক পরিবার চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রায়  ২যুগেও ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি ওই এলাকার মানুষের।

জানা যায়, আনোয়ারা-বাঁশখালীর সীমান্তবর্তী হয়ে বয়ে যাওয়া শঙ্খ নদী। বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড তেইচ্ছিপাড়া, খন্দকার পাড়া ও পূর্ব পুকুরিয়া এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদীর প্রায় ২ কি.মি. বাঁধে দীর্ঘ দুইযুগেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। তাছাড়া এই এলাকায় নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজারের মাধ্যমে দীর্ঘদিন যাবৎ দেদারসে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে বাঁশখালী -আনোয়ারার বিভিন্ন প্রভাবশালী বালু সিণ্ডিকেট চক্র। তেইচ্ছিপাড়া এলাকা সংলগ্ন শঙ্খ নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন এলাকায় সাপ্লাই করে থাকেন প্রভাবশালীরা, এতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র লাখ লাখ টাকা অবৈধ উপার্জন করলেও দেখার কেউ নেই। বালু উত্তোলনের ফলে ওই এলাকায় নদী ভাঙ্গন প্রবণতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও একাধিক সুত্রে জানা গেছে।

প্রতিবছর বর্ষার মৌসুম আসলেই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে পড়ে অনেক বসতভিটা, এতে বাস্তুচ্যুত হয়ে পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন জায়গাতে মাথাগোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে শত শত পরিবার। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় রিমাল প্রভাবে জোয়ারের পানির প্রবল স্রোতে শঙ্খ নদী ভাঙ্গনে অন্তত ৫শতাধিক পরিবারের মানুষের বসতঘর যে কোন মূহুর্তেই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী।

সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায় ওই এলাকায় নদী ভাঙ্গন চিত্র, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করতে দেখা গেছে ওই এলাকার শত শত পরিবারের মানুষ।

স্থানীয় বেদার, মনিরুল ইসলাম, আব্দুল জব্বার, শাহাবুদ্দিন, শহীদুল্লাহ, আমির হোসেনসহ বেশ কয়েকজন জানান, বিগত ২০ বছর যাবত আমরা আতংকের মধ্যে আছি। অনেক পরিবারের বসতভিটা ও শত শত একর জায়গা জমি বিলীন হয়ে গেছে, প্রতিবছর নদী ভাঙ্গন ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেলেও কিন্তু দেখার কেউ নেই। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে এলাকাটি ঝুঁকিমুক্ত করতে সরকার কাছে জোর দাবি জানান তারা। আনোয়ারা সীমানায় গড়ে উঠা চর এলাকায় বাঁশখালী পুকুরিয়া তেইচ্ছিপাড়া এলাকার বাস্তুচ্যুত পরিবারের জায়গা থাকলেও বিগত ২০ বছর যাবৎ এক ইঞ্চি পরিমাণ জমিও ভোগ করতে পারছেনা এলাকার বাস্তুচ্যুতরা।

পুকুরিয়া ৮ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ফরিদ আহমদ বলেন, শঙ্খ নদী পার্শ্ববর্তী তেইচ্ছিপাড়া,খন্দকার পাড়া, পূর্ব পুকুরিয়া এলাকায় শঙ্খ নদীর প্রায় ২ কি. মি বাঁধ বিগত ২০ বছর যাবত অরক্ষিত থাকার ফলে শত শত পরিবারের বসতভিটা ও শত শত একর জায়গা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে ওইসব পরিবারের কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পুকুরিয়া, সাধনপুর, লটমনি, বাণীগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার পাহাড়ি পাদদেশে মাথাগোঁজার ঠাঁই করে নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বসতভিটা ও শত শত এক  জায়গা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়াতে নিঃস্ব হয়ে গেছে আরও অসংখ্য পরিবারের মানুষ।

প্রতিবছর বর্ষার মৌসুম আসলেই একদিকে শঙ্খ নদীর জোয়ারের পানি, অন্যদিকে পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়ে, এতে ব্যাপক ক্ষতিরমূখে পড়ে পুরো এলাকার মানুষ, বর্তমানে এই এলাকায় বসবাসরত অন্তত ৫শতাধিক পরিবার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে, জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা দরকার, অন্যথায় যে কোনো মূহুর্তেই পুরো এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। ভাঙ্গন এলাকাটিতে সাম্প্রতিক কিছু জিও ব্যাগ বসানো হয়েছিল, ওইসব জিও ব্যাগের বেশির ভাগই বিলীন হয়ে

গেছে। এতে আরো বেশি ঝুঁকিরমূখে পড়েছে পুরো এলাকার মানুষ। বিভিন্ন সময় বরাদ্দ আসার কথা শুনলেও কোন কাজ হয়নি। বিগত ১০ বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন বেশ কয়েকবার এলাকাটি পরিদর্শন করে গেছে কিন্তু অদ্যবদি পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ২০ বছরেও এই এলাকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে এলাকার মানুষকে ঝুঁকিমুক্ত কতৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন ইউপি সদস্য ফরিদ।

এবিষয়ে তথ্য জানতে উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী (এলজিইডি) কাজী ফাহাদ বিন মাহমুদের সাথে যোগাযোগের একাধিক বার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video