ঢাকা , সোমবার, ২০২৪ Jun ২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১
#

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কর্ণফুলীতে ভুয়া কাজীর বিরুদ্ধে ইউএনও'র কাছে আসল কাজীর অভিযোগ

কর্ণফুলী প্রতিনিধি
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২০২৪ মে ৩০, ০৮:০৩ অপরাহ্ন
#

চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা এলাকায় কাজী (বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রার) অফিস খুলে কামরুল ইসলাম (৩৮) নামক এক ভুয়া কাজী দীর্ঘদিন যাবত বিবাহ রেজিস্ট্রি করাচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলেছেন সৈয়দ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম নামে আরেক কাজী। মূলত ভুয়া কাজীর বিরুদ্ধে আসল কাজীর অভিযোগ এটি।

গত বৃহস্পতিবার কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এর কাছে দেওয়া ওই অভিযোগ বলছে, কামরুল ইসলাম নামক কথিত যুবক চরপাথরঘাটায় নিজেকে কাজী পরিচয় দিয়ে পুরাতন ব্রিজঘাটের নুর মাকের্টের ২য় তলায় সাধারণ মানুষের সাথে দীর্ঘদিন প্রতারণা করে আসছেন।

অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার শুন্য পদে ভুয়া কাজীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রতারণা ও দূর্নীতিলব্ধ অর্থ সরকারি কোষাগারে বাজেয়াপ্ত করার আবেদন করেছেন কাজী সৈয়দ মো. নজরুল ইসলাম।

পাশাপাশি চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের বিবাহ ও তালাক

রেজিস্ট্রার নজরুল আরো দাবি করেন, বিগত ২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী জেলা রেজিস্ট্রার তাঁকে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু জুলধা ইউনিয়নের জনৈক কামরুল ইসলামকে বিধিবহির্ভূত ভাবে পটিয়া উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের কাজী শরফুদ্দিন মো. সেলিম ভাগ বাটোয়ারার ভিত্তিতে ভুয়া কাজীর আসনে বসিয়ে রেখেছেন।

এরা দুজনেই অবৈধ ভাবে প্রতারণা করে ১নং (খ) চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন ও ১নং চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে তাঁদের মোবাইল নম্বর সম্বলিত সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে এলাকার মানুষকে বিভ্রান্তি করছেন বলে অভিযোগে জানান। একই সাথে তারা বিবাহ রেজিস্ট্রি করছেন।

একই সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারীতে চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন থেকে কাজী মৌ. নুরুল হুদা অবসর নেন। পরে তথ্য গোপন করে একই বছরের ১৪ মার্চ পটিয়া হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের কাজী শরফুদ্দীন মো. সেলিম অতিরিক্ত কাজীর দায়িত্ব নেন।

নিয়ম রয়েছ অতিরিক্ত কাজী হতে পারবেন অধিক্ষেত্র সীমানা সংলগ্ন এলাকার বা পাশের ইউনিয়নের কোন কাজী। কিন্তু চরপাথরঘাটা ও হাবিলাসদ্বীপ দুই ইউনিয়নের দূরত্ব মাঝখানে ৪টি ইউনিয়ন।

অন্য বিধি বলছে, অতিরিক্ত কাজীর মেয়াদ থাকে ৬০ দিন। ৬০ দিন পর কোনভাবেই দ্বিতীয় বার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া যায় না। ৬০ দিন পরে স্বয়ংক্রিয় ভাবে কাজীর অতিরিক্ত দায়িত্ব বাতিল হয়ে যায়। ফলে, ২০০৭ সালের ১৫ মে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা কাজীর মেয়াদও শেষ হয়ে যায়।

কিন্তু পটিয়ার কাজী শরফুদ্দীন সেলিম বিগত ২০১০ সালের ২৬ মে তাঁকে অতিরিক্ত দায়িত্বের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছেন বলে দাবি করে কথিত ভুয়া কাজী কামরুল কে দিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর ২০১১ সালের ২১ আগষ্ট জেলা রেজিস্ট্রার পুনরায় চরপাথরঘাটা এলাকায় অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন সৈয়দ নজরুল ইসলামকে।

এমনকি গত ১৭ বছর যাবৎ (২০০৭-২০২৪) শরফুদ্দীন মো. সেলিম জুলধা এলাকার কামরুল ইসলাম রেজিস্ট্রারে জাল সই দিয়ে বিবাহ নিবন্ধনের কাজ করছেন। ফলে কামরুলকেই স্থানীয়রা কাজী হিসেবে চিনে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কামরুল কোন সরকারি কাজী না। একই কথা জেলা রেজিস্ট্রার কয়েকবার চিঠি দিয়ে কর্ণফুলী ইউএনও' কে জানিয়েছেন।

আরো তথ্যমিলে, বিগত সময়ে শরফুদ্দীন মো. সেলিম চরলক্ষ্যার কাজী সৈয়দ মো. নজরুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে আইন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন।

পরে তদন্তে প্রমাণিত না হওয়ায় শরফুদ্দীন মো. সেলিমের অভিযোগ খারিজ করে দেন আইন মন্ত্রণালয়। উল্টো সেলিমের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পটিয়ার সাব রেজিস্ট্রার নির্দেশ দেন।

অভিযোগে জানানো হয়, অন্যান্য কাজীরা বয়স দেখে বাল্য বিবাহ রেজিস্ট্রি না করে ফেরত দিলে তা গোপনে করে নেন এই ভুয়া কাজী কামরুল।

কিছুদিন আগেও স্বর্ণালী ক্লাবে এ রকম একটি বাল্য বিবাহ ম্যাজিস্ট্রেট এসে বন্ধ করে দেন। এমনকি ২০১৮ সালেও বাল্য বিবাহের দায়ে ভুয়া কাজীর ওই অফিস সিলগালা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তাকে আবারো অফিস খুলে বিবাহ পড়াতে দেখা গেলে, স্থানীয়দের মাঝে প্রশ্ন উঠে, চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে তাহলে বৈধ কাজী কে?

জানতে চাইলে অভিযোগকারী সৈয়দ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, 'ভূয়া কাজী কামরুল ইসলাম নিজেকে কাজী সেজে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে বিবাহ রেজিষ্ট্রার করছেন। যার আইনগত কোন ভিত্তি নেই। পাশাপাশি সেলিম ও কামরুলের বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে একাধিকবার অভিযোগ করলেও পুলিশ প্রশাসন কিংবা উপজেলা প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি।'

আইনজীবি ও মানবাধিকার কর্মী জিয়া হাবিব আহসান বলেন, 'ভুয়া কাজীর মাধ্যমে করা রেজিস্ট্রিও ভুয়া। তাঁদের মতে নজরদারির অভাবে এ রকম ভুয়া কাজীরা বিয়ে ও তালাক নিবন্ধনের ফাঁদ পেতে বসছেন। এদের কারণেই বিয়ে বিচ্ছেদ, বিদেশে যাওয়াসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে আইনি জটিলতায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ।'

অ্যাডভোকেট তৌফিকুল মওলা সুজন বলেন, 'ভুয়া কাজীর দৌরাত্ম্য কমাতে হলে কাজীর সাইনবোর্ডে নিবন্ধন নাম্বার লেখা বাধ্যতামূলক করতে হবে। আর কাজীদের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ডাটাবেজ এবং ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। যাতে নিবন্ধন নাম্বার দিয়ে যে কেউ কাজী বৈধ না ভুয়া তা যাচাই করতে পারেন।

এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত বলেন, এ বিষয়ে আমরা একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যা জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে যোগাযোগ করে সঠিক কাজীর তথ্য যাচাই-বাছাই করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video