ঢাকা , সোমবার, ২০২৫ এপ্রিল ২১, ৮ বৈশাখ ১৪৩২
#

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রাঙ্গুনিয়ার গভীর নলকূপ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রকাশিত : রবিবার, ২০২৫ জানুয়ারী ১৯, ০৩:২৯ অপরাহ্ন
#

রাঙ্গুনিয়ার ১৯৫০টি সাবমার্সিবল পাম্প বা গভীর নলকূপ প্রশাসনের সহযোগিতায় রাজনীতিবিদ ও বিত্তশালীদের দখলে চলে গেছে। গত ৫ বছরে সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত সাবমার্সিবল পাম্প রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যক্তিগত সম্পদে পরিনত হাওয়ায় সর্বমহলে ব্যাপক কানাঘুষা চলছে। পল্লী অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে বিতরন করা এসব সাবমার্সিবল পাম্প গভীর নলকূপ এখন বিত্তবান, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যক্তি, পরিবার, ব্যক্তিগতসহ চেয়ারম্যান ও গুটিকয়েক তথাকথিত সাংবাদিকের ঘরে ঘরে শোভা পাচ্ছে। সর্বজনীন উম্মুক্তভাবে এ সাবমার্সিবল পাম্প সকলের ব্যবহার না হয়ে ব্যক্তিগত ব্যবহারের অধিক্যতা বেশী।

বিগত পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ২০২০-২০২৪ অর্থবছর রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় লোক সংখ্যার অনুপাতে ১৯৫০টি সাবর্মাসিবল পাম্প বরাদ্দ পায়। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল সুত্রে জানা গেছে, সরকারী ভাবে বরাদ্দ গভীর নলকূপ বিতরন ক্ষেত্রে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও এর মাধ্যমে নির্ধারন করা হয়। সরকারী নীতিমালার অধীনে জেলা জনস্বাস্থ্য অফিসের নিয়োগকৃত ঠিকাদারের মাধ্যমে উপজেলা ওয়ারসন কমিটির সরকারী বাস্তবায়ন করে বিধি মোতাবেক। সরকারী আদেশ অনুয়ায়ী প্রতি ইউনিয়নে বছরে ২৬টি করে নলকূপ বসানোর কথা থাকলেও তা কখনো মানা হয়নি। বসানো হয়েছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আবেদনের প্রেক্ষিতে। সম্প্রতি গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে উপ সচিব মো.আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে জানাযায়, পানির গুণমান, অ্যাকুইফারের প্রাপ্যতা ড্রিলিং অ্যাক্সেসযোগ্যতা (হার্ড লেয়ারের উপস্থিতি), সাইট নির্বাচন করার আগে। ( Water quality, Aquifer aavailability, Drilling accessibility (presence of hard layer) বিবেচনায় site seleetion করার কথা।) এমনকি হাওড় জলাভূমি এলাকায় সুবিধাজনক স্থান ও পানির উৎস নির্বাচন করার কথা বলা হলেও কিন্তু এ আদেশের পূর্বে বরাদ্দের ১৯৫০টি সাবর্মাসিবল পাম্প সম্পূর্ণ বিতরন শেষ হয়ে যায়।

সর্বশেষ অবশিষ্ট থেকে যাওয়া ১৭টি টিবওয়েল বিতরনেও এ আদেশ মানা হয়নি। সরকারী আদেশে বলা আছে, প্রকল্প পরিচালক ডিপিএইচই, নীতিমালা অনুযায়ী নিরাপদ পানি সরবরাহের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে এডিপি বাস্তবায়নে লোক সংখ্যার অনুপাত, পানির বিশুদ্ধতা এবং জিওগ্রাফিক্যাল লোকেশান বিবেচনায় নিয়ে শর্ত পালন করা হয়নি। উপজেলা ওযারসন কমিটির অনুমোদন অনুযায়ী প্রতি ইউনিয়নে বছরে ২৬টি সাবর্মাসিবল পাম্প দেয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু জনপ্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রীর কোটায় ১৩টি, আর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ১৩টি করে ভাগাভাগি হয়। রাঙ্গুনিয়ার ১৫টি ইউনিয়নে বছরে ৩৯০টি করে টিউবওয়েল বসানোর জন্য ওয়ারসন কমিটির সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। সে হিসেব মতে ইউনিয়ন পরিষদ বছরে ১৯৫টি আর মন্ত্রীর কোটায় ১৯৫টি করে ভাগ হলেও কোন ইউনিয়নে ৪টি আবার কোন ইউনিয়নে ৪০টি পর্যন্ত বসানো হয়েছে। নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নলকূপ গুলো বরাদ্দ হয় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায়। ফলে দীর্ঘ ৫টি বছর গরীব অসহায় ও অক্ষম মানুষ গুলো আবেদন করেও নলকূপ বরাদ্দ পাননি। অনিয়ম দুর্নীতির কারনে তাদের একটি বৃহৎ অংশ এসব নলকৃপ না পেয়ে বিশুদ্ধ পানি পান করা থেকে বছরের পর বছর বঞ্চিত থাকতে হয়েছে।

এব্যাপারে সাধারন মানুষ মনে করে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনস্থ রাঙ্গুনিয়া জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা- কর্মচারী এবং ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিকা অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ। উপজেলা প্রশাসনের উদ্দ্যোগ ও উপজেলা ওয়ারসন কমিটির সজনপ্রীতি, অনিয়ম, দুর্নীতির কারনে যাচাই বাচাইয়ের কাজটি এখতেয়ারে নেই বলে জানাগেছে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর থেকে আরো জানাগেছে যাচাই বাচাইয়ের বিষয়টি জন প্রতিনিধিদের চাওয়ার উপর নির্ভর করে। এদিকে কয়েকশ আবেদন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের জমা থাকলেও আরো আবেদন ওয়ারসন কমিটি তথা ইউএনও অফিসে ফাইলবন্দি হযে পড়ে রয়েছে। সঠিকভাবে যাচাই বাচাই না করার কারনে এসব সরকারী নলকূপ গুলো প্রভাবশালীরা সহজে অল্প টাকা-পয়সায় ক্রয় করে নিচ্ছে বলে শতশত আবেদনকারী এপ্রতিনিধির কাছে অভিযোগ করেছে। বর্তমানে যারা গভীর নলকূপ পেয়েছে তারা বিশেষ ব্যাক্তির সুপারিশে পেয়েছে বলে । এমনও অভিযোগ রয়েছে, ইউএনওর সাথে যাদের ব্যাক্তিগত সম্পর্ক জমেছে এমন ব্যাক্তির সুপারিশ ছাড়া অন্যকোন আবেদন বিবেচনায় আনা হচ্ছেনা বলে ভুক্তভোগিরা জানিয়েছেন। সরকারী এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এসব গভীর নলকূপ কমপক্ষে ১০পরিবার বসবাস করছে এমন পাড়ায় কিম্বা বাড়ির সামনে বা রাস্তার ধারে উম্মুক্ত স্থানে বসানোর কথা। যাতে সবাই ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু অনিয়ম দুর্নীতির কারনে এখন এসব নলকূপ গুলো প্রভাবশালীদের বাড়ির অভ্যন্তরে চলে গেছে। এমনও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে যে, একই পরিবারে সাবমার্সিবল পাম্প ১টির অধিক ২টি পর্যন্ত বরাদ্দ নিয়ে বসানোর বহু দৃষ্টান্তের অহরহ প্রমানও রয়েছে অনেক পরিবারের বিরুদ্ধে।

আরো জানা গেছে, বিগত সদ্য বিলুপ্ত ফ্যসিস্ট সরকার আমলে ২০২০- ২০২৪ অর্থবছর রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় বছরে ৩৯০টি করে মোট ১৯৫০টি সাবমার্সিবল পাম্প বসানোর জন্য ৫ বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প বরাদ্দ পায়। রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ডিপিএইচই, প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত ১৯৩৩টি সাবমার্সিবল পাম্প বসানো হয়েছে। চলমান প্রকল্পের ৫ম ধাপের শেষ কিস্তির অবশিষ্ট ১৭টি পাম্প বসানোর কাজ বর্তমানে চালু রয়েছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেই আবেদনকারীকে প্রাধান্য না দিয়ে কিছু পছন্দের ব্যাক্তির নামে বরাদ্দ প্রদান করেন বলে এরকম অভিযোগ পাওয়া গেছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা অফিস থেকে জানাযায়, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় গত ২০২০-২০২৪ অর্থবছর বরাদ্দকৃত প্রকল্পটির অধীনে ১৯৫০টি সাবর্মাসিবল গভীর নলকূপ ৫টি ধাপে ভাগ করে দেয়। তার প্রেক্ষিতে প্রতি ধাপে ৩৯০টি করে সাবমার্সিবল পাম্প বিতরনের রূপরেখা প্রদান করেন। তারই ধারা বাহিকতায় জনগণের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতিবছর এই প্রকল্প থেকে জন বসতিপূর্ণ এলাকায় বিতরনের নিদ্দের্শনা রয়েছে। কিন্তু রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় মন্ত্রনালয়ের নিদের্শনা তৎকালীন প্রশাসন যেমনি গুরুত্ব দেয়নি, তেমনি বিগত সরকারের আমলে নিয়োগকৃত বর্তমান ইউএনও একই পথ অনুসরন করছেন বলে রাজনীতি মহল থেকে অহরহ অভিযোগ উঠেছে। চলমান ৫ম কিস্তির অবশিষ্ট ১৭টি পাম্প বিতরণে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ যদিও, তবে গত ১৪ নভেম্বর মাসিক সভায় মাহমুদুল হাসান সাবমার্সিবল পাম্প বিতরণের স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি প্রয়োগের কথা বলেন। কিন্তু গত ৫ আগষ্টের পরে অবশিস্ট ১৭টি সাবামার্সিবল পাম্প বিতরনে সজনপ্রীতি ও অনিয়ম হয়েছে বলে একাধিক ভূক্তভোগি অভিযোগ করেন। তারা আরও অভিযোগ করে আমাদের প্রতিনিধিকে জানায়, আবেদনকারীর শতাধিক আবেদন ইউএনও অফিসে ফাইল জমা রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সচেতন মহল জানায়, দেশের দারিদ্রতাকে সামনে রেখে সুষ্ঠ পরিকল্পনার মাধ্যমে গরীব অক্ষম পরিবার গুলোর জন্য জনস্বাস্থ্য বিভাগের নলকূপ সরবরাহ নিশ্চিত করা বিশেষ প্রয়োজন। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইয়াকুব ফরহাদ জানান, সরকারীভাবে নলকূপ বরাদ্ধ পেতে হলে আগে ইউপি চেয়ারম্যান বরাবরে আবেদন করতে হতো এখন তা হয়না।

এখন আবেদন সরাসরি ইউএনওর কাছে করতে হয়। পরে আবেদনটি ওয়ারসন কমিটি যাচাই-বাচাই শেষে ইউএনও জনস্বাস্থ্য অফিসে পাঠিয়ে দেন। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী নলকূপ বিতরণের ক্ষেত্রে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও এর সমন্বয়ে গঠিত এই ওয়ারসন কমিটি। ওয়ারসন কমিটির সিন্ধান্ত মোতাবেক বন্টন বা বরাদ্দ নির্ধারন করা হয়। বরাদ্দকৃতের পর নলকূপ গুলো বসানো হয় জেলা অফিস কর্তৃক নিয়োগকৃত ঠিকাদারের মাধ্যমে এতে আমাদের কোন হাত নেই। শুধু আমাদের কাজ থাকে, অফিস ঘুছানো, বরাদ্দ প্রাপ্ত মালামাল সংরক্ষন করা, বরাদ্দ প্রাপ্তিদের মাঝে ঠিকমত বিতরন করা, নির্ধারিত জায়গায় সঠিকভাবে বসানো হচ্ছে কিনা।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video