চট্টগ্রামের আনোয়ারা-বাঁশখালী-পেকুয়া সংযোগ (পিএবি) সড়ক যেন এখন ভাড়া নৈরাজ্যের এক মহাদুর্গ। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার আসলেই স্বাভাবিকের চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি ভাড়া আদায় করতে না পারলে সিএনজির চাকা চলতে চায় না। যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়লেও দেখার কেউ নেই বলে অভিযোগ যাত্রী মহলের।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে পরিদর্শনকালে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, বাঁশখালীর গুনাগরী, চাঁদপুর, উপজেলা সদর, পৌরসভার মিয়ার বাজার, টাইমবাজার, চাম্বল বাজার, প্রেমবাজারসহ অন্তত ছয়টি স্পটে দেদারসে চলছে ভাড়া নৈরাজ্য। প্রতি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার যাত্রীদের জিম্মি করে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুণ বেশি ভাড়া আদায় করে চালকরা। বিশেষ করে সিএনজি চালিত (অটোরিকশা) চালকদের বিরুদ্ধে যাত্রীদের এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ভাড়া নৈরাজ্য ও হয়রানি থেকে কোনো অবস্থাতেই মুক্তি পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ।
উপজেলা সদর থেকে গুনাগরী পর্যন্ত সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা, গুনাগরী থেকে আনোয়ারা চাতুরী চৌমুহনী ৪০ টাকা, মইজ্জ্যারটেক পর্যন্ত ৬০ টাকা এবং কর্ণফুলী ব্রিজের উত্তর পাশে স্টেশন পর্যন্ত ৮০ টাকা নির্ধারিত থাকার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে শহর থেকে গ্রামমুখী যাত্রীদের কর্ণফুলী নতুন ব্রিজ স্টেশনে জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। একইভাবে, শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্রাম থেকে শহরমুখী যাত্রীদের বাঁশখালীর বিভিন্ন স্টেশনে জিম্মি করে স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে চরম বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে যাত্রীরা এমন অভিযোগ করলেও এখনো পর্যন্ত ভাড়া নৈরাজ্য ও হয়রানি থেকে মুক্তি পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ।
পরিদর্শনকালে ব্যাংকার নুরুল কবির, মো. শাহাবুদ্দিন, মো. নাজিম উদ্দীন, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মো. হোসাইন, আজিজুল হক, আরিফ বিন নোমান, ব্যবসায়ী শাহাদাত ইউসুফ চৌধুরী, জাহাঙ্গীর আলম, আবুল কালাম, স্কুল শিক্ষিকা নাছিমা আক্তার, মনিরা বেগম, শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম, আবুল কাশেম, সৈয়দুল মোস্তফা, দিল মোহাম্মদ, প্রবাসী আনোয়ার হোসেন, বেলাল উদ্দিন, আবুল কালাম, এয়ার মোহাম্মদসহ বেশ কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করেন— বাঁশখালীর প্রধান সড়কে তীব্র যানজটের কারণে এমনিতেই যাত্রী ভোগান্তি চরমে। শহরে থাকা অধিকাংশ মানুষ প্রতি বৃহস্পতিবার গ্রামে ফিরে যাওয়ার পথে সিএনজি চালকরা যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। শুধু তাই নয়, শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্রাম থেকে শহরমুখী যাত্রীদের জিম্মি করে বাঁশখালীর সিএনজি স্টেশনগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। কেউ প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেও দ্বিধা করে না তারা। ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ করে যাত্রীদের হয়রানিমুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
তবে অভিযোগের বিষয়ে সিএনজি চালকরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হলেও সরেজমিনে গুনাগরী স্টেশন ও উপজেলা সদর সিএনজি স্টেশনে যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ঘটনা দেখা গেছে। যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সময় বেশ কয়েকটি ভিডিও ধারণ করা হয়। প্রতিবেদকের ধারণ করা ভিডিওতে ভাড়া নৈরাজ্যের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। বাঁশখালীর বিভিন্ন স্টেশনের এসোসিয়েশনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের ডেকে আলোচনা করা হবে এবং তাদের মাধ্যমে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারী চালকদের সতর্ক করা হবে। যদি তারা সতর্ক না হয়, তাহলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।"
মন্তব্য করুন