নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২০২১ এপ্রিল ১৩, ০৪:১৭ অপরাহ্ন
#
এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউন ও পবিত্র রমজান সামনে রেখে ভিড় বেড়েছে কাঁচাবাজারগুলোতে। দর কষাকষি করেই চলছে বেশিরভাগ পণ্যের কেনাকাটা। ভিড় এড়াতে বিক্রেতাদের অনেকে এক দামে বিক্রি করছেন বেশি চাহিদার গরুর মাংস, মুরগি, মাছ, সবজি, ডিম, লেবু, পুদিনা, কাঁচামরিচ ইত্যাদি। ফুরসত মিলছে না মুদি দোকানের বিক্রয়কর্মীদেরও।
সরেজমিন নগরের কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় বেশিরভাগ বিক্রয়কর্মী ও ক্রেতাদের মুখে মাস্ক পরা থাকলেও তিন ফুটের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা ছিল কঠিন।
কাজীর দেউড়ি কাঁচাবাজার থেকে এক কেজি গরুর মাংস কিনেছেন আজিজুর রহমান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পরিচিত দোকান থেকে দেশি গরুর হাড় ছাড়া এক কেজি মাংস নিলাম ৭৫০ টাকায়।
তিনি জানান, নগরের অলিগলিতে অনেকে গরু জবাই করে সব ধরনের মাংসের ভাগ বিক্রি করছে ১ হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। সেটার স্বাদ বেশি হলেও দেরিতে যাওয়ায় কিনতে পারিনি।
মাছ, মুরগি, ডিম, চাল, ডাল, সয়াবিন, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ছোলা, কাঁচামরিচের দাম স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানান বিক্রয়কর্মীরা।
তবে সরবরাহ কমে যাওয়ায় রসালো বড় লেবুর দাম বেশি হাঁকা হচ্ছে এবার। কাজীর দেউড়ি বাজারের আল আমিন নামের একজন বিক্রেতা জানান, তিনটি বড় লেবু বিক্রি করেছি ১৩০ টাকা। ছোট লেবুর দাম কম।
তিনি জানান, অনেকে ইফতারে জুস তৈরির জন্য কাঁচা আম, পাকা বেলও কিনছেন। বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এসব দেশি ফল।
মুদির দোকানগুলোতে ক্রেতারা এক সপ্তাহের জন্য নিত্য ভোগ্যপণ্য কেনার পাশাপাশি অনেকে গরিব প্রতিবেশী, স্বজনদের বিতরণের জন্য সেহেরি ও ইফতারসামগ্রী কিনতে দেখা গেছে। এর ফলে কেনাবেচার চাপ ছিল বেশি। কথা বলারও যেন ফুরসত মিলছে না তাদের। মোড়কজাত আটা, ময়দা, সুজি, ডাল, চিনি, লবণ, শরবতের পাউডার বিভিন্ন ধরনের মসলার প্যাকেটের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে। মানভেদে বিভিন্ন জাতের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
ফলের দোকানগুলোতে চলছে জমজমাট বিকিকিনি। রমজানের ইফতার ও করোনা প্রতিরোধের বিষয় মাথায় রেখে মোসাম্বি-মাল্টা, আঙুর, আপেল, খেজুর, পেয়ারা, তরমুজ, বাঙ্গিসহ দেশি-বিদেশি ফল কিনছেন ক্রেতারা।
টিসিবির ট্রাকে বাড়ছে ছোলা, খেজুর
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চট্টগ্রাম আঞ্চলিক প্রধান জামাল উদ্দিন জানান, রমজান উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) চট্টগ্রাম শহরে ৩০টি ট্রাকে ছোলা, খেজুর, চিনি, সয়াবিন, মশুর ডাল, পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ডিলাররা।
প্রতিটি ট্রাকে ১০০ কেজি খেজুর, ৭০০ কেজি চিনি, ৩০০ কেজি ডাল, ১২০০ লিটার সয়াবিন, ১ টন পেঁয়াজ ও ১ টন ছোলা দেওয়া হয়েছে। বুধবার থেকে প্রতি ট্রাকে আরও ২০ কেজি করে খেজুর বেশি দেওয়া হবে।
তিনি জানান, একজন ভোক্তা ৫৫ টাকা দরে ২ কেজি ছোলা, ৮০ টাকা দরে ১ কেজি খেজুর, ৫৫ টাকা দরে ২-৩ কেজি সাদা চিনি, ৫৫ টাকা দরে ২ কেজি মশুর ডাল, ২০ টাকা দরে ৪-৫ কেজি পেঁয়াজ, ১০০ টাকা দরে ২-৪ লিটার সয়াবিন (সরবরাহ থাকলে ৫ লিটার বোতল) কিনতে পারবেন।
বন্দরে এখনো আসছে ছোলা, খেজুর
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মো. নাছির উদ্দিন জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরের গত জুলাই থেকে সোমবার (১২ এপ্রিল) পর্যন্ত বন্দরে আসা খেজুরের ছাড়পত্র ইস্যু করা হয়েছে ৯০ হাজার ২০৭ টন। আগের অর্থবছরে (জুলাই-জুন) যা ছিল ৪০ হাজার টন।
২০২০-২১ অর্থবছরের গত জুলাই থেকে সোমবার (১২ এপ্রিল) পর্যন্ত ছোলার ছাড়পত্র ইস্যু হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৮৮০ টন। আগের অর্থবছরে যা ছিল ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৭০ টন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলছে
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক জানান, নগরে ছয় জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট করোনা স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা, মাস্ক পরা, সরকার নির্দেশিত আদেশ প্রতিপালন, বাজার মনিটরিংসহ সব বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলছে। অভিযানকালে আইন লংঘনকারীদের জরিমানা, জনসাধারণকে করোনা বিষয়ে সচেতন করার পাশাপাশি মাস্ক বিতরণও করা হচ্ছে। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া অভিযান সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
মন্তব্য করুন