মাঘের হাড়কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে ফসলের মাঠে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ফটিকছড়ির কৃষকেরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা কনকনে শীত উপেক্ষা করেই মাঠে চলছে হালচাষ।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে কৃষকদের ব্যস্ততা। গরু ও ট্রাক্টর দিয়ে জমি তৈরি, পানি সেচ, বোরো ধানের চারা বীজতলা থেকে উঠিয়ে জমিতে রোপণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। পাশাপাশি নারীদেরও মাঠে পরিশ্রম করতে দেখা গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার উপজেলায় কয়েক গুণ বেশি জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর ৮,৫০০ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্য থাকলেও সবকিছু অনুকূলে থাকলে এই পরিমাণ বেড়ে ৯,০০০ বা ৯,৫০০ হেক্টর ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। শীতে বীজতলার তেমন ক্ষতি না হওয়ায় কৃষকরা স্বস্তিতে আছেন এবং আবাদ ঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নের কৃষক আব্দুস সাত্তার জানান, "প্রতি বছর ধানের চাষ করি। এ বছরও করছি। তবে বীজের দাম বেড়েছে, শ্রমিকের মজুরিও বেশি। ফলন ভালো হলে লাভের মুখ দেখা যাবে।"
ভূজপুরের কৃষক মতিন মিয়া বলেন, "আমি ২০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে বোরো ধান চাষ করছি। গত বছর ভালো লাভ হয়েছিল, তাই এবারও চাষ করছি। তবে সারের দাম একটু কম হলে আরও বেশি লাভ হতো। পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ, মেশিন দিয়ে পানি সেচ দেওয়া ও কামলার মজুরি বাবদ প্রচুর খরচ হচ্ছে। তারপরও আশাবাদী, এবার ফলন আরও ভালো হবে।"
ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, "চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বীজতলার ক্ষতি হয়নি, ফলে কৃষকরা স্বস্তিতে রয়েছেন। লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কঠোর পরিশ্রম করছেন। কৃষকদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনে সার্বিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরো চাষ হবে।"
এছাড়া, বোরো বীজতলা প্রস্তুত থেকে শুরু করে জমিতে চারা রোপণ পর্যন্ত কৃষকদের পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, "বোরো চাষ আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ফটিকছড়ির কৃষকদের কঠোর পরিশ্রম ও যত্নে বোরো ধান চাষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সরকার কৃষকদের উন্নয়ন ও সচ্ছলতার জন্য নানা ধরনের সহায়তা প্রদান করছে, যাতে তারা অধিক উৎপাদন করতে পারেন।"
"সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ ও প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে এ বছর ফসলের ফলন বৃদ্ধি পাবে, কৃষকদের আয় বাড়বে এবং দেশীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। আমরা সবাই মিলে এই চাষে সাফল্য অর্জন করতে পারব এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী হবে।"
মন্তব্য করুন