চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আগামী ২ বছরের জন্য ১২ জন ব্যক্তিকে বেসরকারি কারা পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে এ নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়।
নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ১২ জন বেসরকারি কারা পরিদর্শকরা হলেন:
আনোয়ারা উপজেলার রুদুরা এলাকার মোস্তাফা হোসেনের পুত্র জোবাইরুল আলম মানিক, যিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক।
মীরসরাই উপজেলার পশ্চিম মিঠানালা এলাকার আবুল কালামের পুত্র মো. আমিনুল ইসলাম তৌহিদ, যার রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সাতকানিয়া উপজেলার গরিবারবিলা এলাকার আব্দুল মোতালেবের পুত্র মোজাম্মেল হক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এবং রেয়াজুদ্দিন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতা।
চন্দনাইশ উপজেলার পশ্চিম কেশুয়া এলাকার মোহাম্মদ আলতাফ উদ্দীনের পুত্র মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন।
বাঁশখালী উপজেলার বৈলতলী মহাজন বাড়ির অনিল বরণ বিশ্বাসের পুত্র উজ্জল বরণ বিশ্বাস, এলডিপির যুব সংগঠন গণতান্ত্রিক যুবদল চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক।
নগরীর কোতোয়ালী থানাধিন বদরপাতি এলাকার সৈয়দ আহমদ হোসেনের পুত্র সৈয়দ আবুল বশর, আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং টেরীবাজারের ব্যবসায়ী সমাজ সেবক।
প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন, নগরীর চান্দগাও থানাধিন গোলাম আলী নাজির বাড়ি এলাকার শামশুল হকের পুত্র, যার রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।
হাটহাজারী উপজেলার ফটিকা এলাকার মাওলানা ক্বারী নুরুল কবিরের পুত্র মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, বাংলাদেশ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ও মানবাধিকার কর্মী, সরকারের গঠিত গুম কমিশনের সদস্য।
মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, কোতোয়ালী থানাধিন পাথরঘাটা সিপিডিএল রমিজ শহীদ আব্দুস সাত্তারের পুত্র।
জাফর আহম্মদ, চান্দগাও থানাধিন ওমর আলী মাতাব্বর বাড়ী সুলতান আহমদের পুত্র, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও চান্দগাঁও থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
নগরীর হালিশহর থানাধিন বি-ব্লকের মৃত মনজুরুল হকের মেয়ে সুলতানা বেগম, চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, সাবেক ছাত্রদলের নেত্রী এবং নাট্য কর্মী আবৃত্তিকার।
সদরঘাট থানাধিন ডিটি রোডস্থ হাজী মঞ্চিলের কবির আহমদের মেয়ে কামরুন নাহার লিজা, চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক।
এ বিষয়ে সংস্কৃতিক কর্মী এবং চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সুলতানা বেগম (আঁখি সুলতানা) বলেন, "চট্টগ্রাম কারাগারে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের সমস্যাগুলি নিয়ে কাজ করতে আমি প্রস্তুত। কারাগারের অভ্যন্তরের অনেক সমস্যা রয়েছে, এগুলো চিহ্নিত করে সবার সহযোগিতা নিয়ে কাজ করব।"
নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত বেসরকারি কারা পরিদর্শক জোবাইরুল আলম মানিক বলেন, "কারাগারে সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে, অনেক অনিয়ম, নির্যাতন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে আসছে। আমরা যতটুকু সম্ভব এ বিষয় নিয়ে কাজ করে যাব।"
এ বিষয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, "আমরা যারা জেল জুলুম এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছি, তাদের দৃষ্টিতে যে সমস্যাগুলি ধরা পড়েছে, তা নিয়ে কাজ করব। এটি মূলত একটি স্বেচ্ছাসেবী পদ।"
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য এবং মানবাধিকার কর্মী মোহাম্মদ আতাউল্লাহ বলেন, "মানবাধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে কারাগারে কাজ করার চেষ্টা করব, যাতে কারাবন্দি ব্যক্তিরা তাদের প্রাপ্য রাষ্ট্রীয় অধিকার, খাবার, থাকা এবং চিকিৎসা পায়।"
নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত বেসরকারি কারা পরিদর্শক সৈয়দ আবুল বশর বলেন, "চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার আমার বাড়ির কাছেই। আমি প্রতিবেশী হিসেবে যেটা জানি, তা অন্যরা জানে না। কারাগারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অহরহ ঘটে। আমি সাধ্যমত সবাইকে নিয়ে কারাগারের অভ্যন্তরের সব কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করব।"
বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, "জেল কোডের ১ম খন্ডের ৫৬ ধারা (১ ও ২) বিধি অনুযায়ী ১০ জন পুরুষ এবং ২ জন নারীকে পরবর্তী ২ বছরের জন্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের বেসরকারি কারা পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।"
মন্তব্য করুন