ঢাকা , রবিবার, ২০২৫ এপ্রিল ২০, ৭ বৈশাখ ১৪৩২
#

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রাঙ্গুনিয়ায় হযরত নক্বী উদ্দীন শাহ (রাহ.)-এর উরস অনুষ্ঠিত

অনিরুদ্ধ অপু, চট্টগ্রাম।
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২০২৫ ফেব্রুয়ারী ১৩, ১২:৪৩ অপরাহ্ন
#

চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা কাজী আব্দুল আলীম রিজভী বলেন, যে সকল বান্দাহ আল্লাহ ও তাঁর নবী-রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধে আহ্বান জানান, তাঁরাই আল্লাহর নেককার বান্দাহ ও আদর্শ মানুষ। শান্তি, স্থিতিশীলতা, বৈষম্যবিরোধী, ইসলামের কল্যাণকর সমাজ প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রগঠনে আদর্শ মানুষদের অনুসরণ প্রয়োজন।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ১৫ নম্বর লালানগর ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া হযরত নক্বী উদ্দীন শাহ (রাহ.)-এর সালানা উরসে পাক উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আজীমুশশান জলসায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, আল্লাহর মকবুল বান্দাহ ও আউলিয়ায়ে কেরামের ইতাআত বা অনুকরণে তাঁদের জিকির বা স্মরণ করা জরুরি।

মোল্লাপাড়া সমাজ কমিটি ও প্রবাসী কল্যাণ সমিতির ব্যবস্থাপনায় মোল্লাপাড়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত জলসায় সভাপতিত্ব করেন হাটহাজারী সরকারি কলেজের অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন।

প্রধান ওয়ায়েজের তাকরিরে রানীরহাট আল আমীন ফাজিল মাদরাসার প্রভাষক মাওলানা মুহাম্মদ আবুল কালাম বয়ানী বলেন, এ দেশে মুসলিম জাতিগঠন ও সমাজে ইসলামী আধ্যাত্মিকতার আবহ তৈরিতে আউলিয়ায়ে কেরামের অসাধারণ অবদান রয়েছে। তাই ইসলাম বিস্তারে তাঁদের স্মরণ, তাঁদের কবরের পবিত্রতা রক্ষা ও জিয়ারতের উদ্দেশ্যে নির্মিত মাজার শরিফ ভাঙচুর-ধ্বংসের অপচেষ্টা, ইসলামের আধ্যাত্মিক প্রাণপুরুষ ও মুবাল্লিগদের নিদর্শন ধ্বংসের শামিল। তবে মাজারে সিজদাহ, নারী-পুরুষের অবাধ সমাগম, বাদ্য ও গানবাজনা এবং পবিত্র উরস উপলক্ষে মদ-জুয়ার আসর তথা শরিয়তবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধে দরগাহ কমিটি বা মাজার কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীল হতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামী সাহিত্যিক ও মানবাধিকার গবেষক মাওলানা মুহাম্মদ জহুরুল আনোয়ার বলেন, হক্কানি অলি-বুজুর্গ ও উলামা-মাশায়িখের সোহবত বা সংস্পর্শে মানুষ ইসলামের ঈমান-আকিদা, ইবাদত-বন্দেগি, আখলাক-আমল, মৌলিক শিক্ষা-দীক্ষা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতায় মনোনিবেশ ও মননশীলতা গড়ে তোলে। তবে ইসলামের রাজনৈতিক আদর্শ-দর্শনে উদাসীনতা, নির্লিপ্ততা, মুসলিম স্বার্থ সংরক্ষণ ও জাতিগত ঐক্যে আকিদাবিষয়ক মতানৈক্যের প্রভাব, ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শে সখ্যতা ইত্যাদির কারণে ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদ ক্রমশ প্রসারিত হতে চলেছে। বৃহত্তর মুসলিম জনগণের এ দেশে তা কোনো যুক্তিতেই মেনে নেওয়া যায় না।

অমুসলিম অধ্যুষিত ভারতবর্ষে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী (রাহ.)-এর অবদান প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, খাজা গরীব-এ-নওয়াজ (রাহ.)-এর রূহানি তাওয়াজ্জুহ বা আধ্যাত্মিক প্রভাবে হিন্দুস্থানে মুসলিম জাতিসত্তার বিকাশ ঘটে। তবে সামাজিকভাবে ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় তাঁকে হিন্দু রাজা পৃথ্বীরাজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে। এ দেশেও ইসলামী হুকুমতের আবহ তৈরিতে হযরত শাহ জালাল ইয়েমেনী (রাহ.)-কে হিন্দু রাজা গৌরগোবিন্দের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়।

আ'লা হযরত আল্লামা শাহ আহমদ রেযা খান (রাহ.)-এর রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে তিনি বলেন, পাক-ভারত উপমহাদেশে হানাফি মাযহাব ও সুন্নি আকিদার বিস্তারে অসাধারণ অবদানের পাশাপাশি তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তিতেই কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষে পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র ‘পাকিস্তান’ সৃষ্টি হয়। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শাসনামলের প্রধানমন্ত্রী মাওলানা শাহ আজিজুর রহমান (রাহ.)-এর প্রস্তাবনায় সংবিধানে "বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম" এবং "সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ তা'আলার ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস" যুক্ত করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে ধর্মমন্ত্রী মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান (রাহ.)-এর প্রস্তাবনায় সংবিধানে "ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম" সংযোজন করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের শাসনামলে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিলুপ্ত করা পাঠ্যপুস্তক ও সরকারি স্থাপনা থেকে মুসলিম ঐতিহ্য ও ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতির পুনরুদ্ধার ও পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সুন্নি আকিদাভিত্তিক ইসলামী রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও সামাজিক সংস্থাগুলোর আরও গণমুখী হওয়া সময়ের অপরিহার্য দাবি।

উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন মোল্লাপাড়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুহাম্মদ আবদুস সামাদ আল কাদেরী। অতিথি বক্তা ছিলেন রাঙ্গুনিয়া নূরুল উলূম কামিল মাদরাসার মুদাররিস মাওলানা মুহাম্মদ ইদ্রিস আল কাদেরী, রাঙ্গামাটি কাঠালতলী জামে মসজিদের খতিব মাওলানা হাফিজ মুহাম্মদ সেকান্দর হোসাইন রিজভী, হযরত সাদেক শাহ দাখিল মাদরাসার সুপারিনটেনডেন্ট মাওলানা আবদুল জব্বার কাদেরী, রাঙ্গামাটি বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদের খতিব মাওলানা হাফিজ মুহাম্মদ সুলতান মাহমুদ, মুরাদনগর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার মুদাররিস মাওলানা মামুনুর রশীদ বাবর, হযরত আবু বকর সুন্নিয়া মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাজী আতাউর রহমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত গাউসিয়া কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইখতিয়ার হোসাইন, ইউএই আজমান গাউসিয়া কমিটির সহ-সভাপতি ফিরোজ মাহমুদ চৌধুরী মানিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ মামুন বলেন, ইসলামের আধ্যাত্মিকতার মূল্যায়নের মাধ্যমে মুসলমানদের জীবন ও কর্মে ইসলামী আদর্শের প্রতিফলন ঘটাতে স্ব স্ব অবস্থান থেকে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। উরসে পাকের সার্বিক সফলতায় সকলের অংশগ্রহণ ও ভূমিকার জন্য তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে মাহফিলের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video