ঢাকা , সোমবার, ২০২৫ মার্চ ৩১, ১৭ চৈত্র ১৪৩১
#

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ৬৫টি ইটভাটায় বনের কাঠ পোড়ানো, পরিবেশ নষ্ট

অনিরুদ্ধ অপু, চট্টগ্রাম।
প্রকাশিত : রবিবার, ২০২৫ মার্চ ২৩, ০২:৩৪ অপরাহ্ন
#

উত্তর চট্টগ্রামে প্রায় দুই শতাধিক ইটভাটার মধ্যে শুধু রাঙ্গুনিয়ায় রয়েছে ৬৯টি ইটভাটা। রাঙ্গুনিয়ার এসব ইটভাটার মধ্যে ৬৫ টিতেই পুড়ছে বনের কাঠ, ফলে জীববৈচিত্র্য ও আশপাশের পরিবেশ চরম হুমকীর মুখে পড়েছে। তবে ইতিপূর্বে পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১১৭টি ভাটার খতিয়ান থাকলেও এবছর রাজনৈতিক কারণে কমে দাঁড়িয়েছে ৬৯ টিতে।

জানাগেছে, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার ৪ উপজেলায় দুই শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। তার মধ্যে শুধু রাঙ্গুনিয়ায় এবছর চালু রয়েছে ৬৯টি ইটভাটা। এসব ইটভাটায় পুড়ছে বনের কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বনভূমি। নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও ফসলি জমির উর্বরতা। বনবিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারির অভাবে কিছুতেই থামানো হচ্ছে না বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। এসব ইটভাটার কোনোটির নেই অনুমোদন। এসব ইটভাটা থেকে প্রতিনিয়ত নির্গত হচ্ছে কালো ধোঁয়া। যা পরিবেশকে মারাত্মক ক্ষতির মুখে ফেলছে।

পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠনের দাবি, ব্রিকফিল্ডের কালো ধোঁয়ায় থাকা ক্ষতিকর কার্বন ডাই-অক্সাইড মানবদেহে ভয়ংকর প্রভাব ফেলছে। বৃদ্ধ ও শিশুরা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভুগছেন। শুধু তাই নয়, ইটভাটাগুলোতে বনের গাছ কেটে গোপন আস্তানায় প্রথমে মজুদ করা হয়। তারপর সেখান থেকে প্রকাশ্যে দিনদুপুরে এবং ইদানীং প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সারারাত ব্যাপী চাঁদের গাড়ি, পি-কাপ ও মিনিট্রাক যোগে (ওপেন-সিক্রেট) ব্রিকফিল্ডগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়।

তাছাড়াও অর্ধশতাধিক ইটভাটার মালিক ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বরতা তথা টপসয়েল ক্রয় করে ইট তৈরি করছে, কেউ-কেউ পাহাড় ও বনভূমি মাটি কেটে এনে পরিবেশ নষ্ট করছে। পরিবেশবিদ ও সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, এটি পরিবেশের জন্য মারাত্মক উদ্বেগজনক। বৈধ-অবৈধ এসব ইটভাটায় পরিবেশের ক্ষতি হলেও স্থানীয় প্রশাসন দেখেও যেন দেখছে না।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিএসটিআইয়ের সাম্প্রতিক অভিযান সত্ত্বেও বন্ধ নেই এসব ইটভাটার ইট তৈরির কার্যক্রম। পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও কাস্টম বিভাগের একটি চক্রের উৎকোচ বাণিজ্যের কারণে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটাগুলো প্রকাশ্যে ইট উৎপাদন করে তা বাজারজাত করছে।

অনুসন্ধানে পরিসংখ্যান করে আরও জানাগেছে, একটি ইটভাটায় দৈনিক জ্বালানী কাঠের প্রয়োজন হয় গড়ে ৩শ মন কাঠ। যার স্থানীয় বাজার মূল্য মনপ্রতি ১৮০ টাকা হিসেবে দৈনিক ৫১ হাজার টাকা। সে হিসাব মতে প্রতিদিন বন থেকে জ্বালানী কাঠ যাচ্ছে ৩৩ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা, রাঙ্গুনিয়ায় প্রতিমাসে ১০ কোটি টাকার কাঠ লাগে। এভাবে কাঠ যেতে থাকলে অচিরেই বনাঞ্চল শেষ হতে ২০২৫ সালই যথেষ্ট।

পরিবেশবাদী আইনজীবী এডভোকেট আজিম উদ্দিন লাভলু জানান, চট্টগ্রাম জেলায় কোনো নিয়ম না মেনেই ইটভাটা স্থাপন হচ্ছে। হাইকোর্টের বিধিনিষেধ থাকার পরও স্থানীয় প্রশাসন ও ইটভাটার মালিকরা ইটভাটা স্থাপন করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা ও আইনের প্রয়োগ না হওয়াটাই দায়ী বলে তিনি মনে করেন।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video