প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২০২১ জুলাই ০১, ০৭:৪৮ পূর্বাহ্ন
#
করোনা অতিমারিতে মানুষের আয় কমেছে। চাকরি হারিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন অনেকেই। ব্র্যাক, ইউএন উইমেন বাংলাদেশ এবং নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির গবেষণা রিপোর্ট বলছে, করোনায় ৭৭ শতাংশ পরিবারে গড় মাসিক আয় কমেছে। ৩৪ শতাংশ মানুষ চাকরি হারিয়েছে, ঋণ বেড়েছে ৩১ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংকট আরও কয়েকমাস থাকলে দারিদ্র চরম আকার ধারণ করবে।
করোনা অতিমারির ধাক্কায় মধ্যবিত্ত অনেক পরিবারেরই উপার্জন কমে যাওয়ায় প্রচণ্ড আর্থিক টানাপোড়ন শুরু হয়েছে। মিরপুর বাতেনগর আবাসিক এলাকায় বাস করেন উম্মে সালমা। তার স্বামী একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে চাকরি করতেন, ২০২০ সালে করোনার জন্য চাকরি হারান। সালমা ব্লক বাটিকের কাজ ও ঘরে তৈরি খাবার বিক্রি করে চেষ্টা করছেন সংসার চালাতে। কিন্তু লকডাউনে সেটাও করা যাচ্ছেনা ঠিকমতো। ঋণের অংক বাড়ছে, কয়েক মাসের বাসা ভাড়া বাকি পরায় বাড়িওয়ালা পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে টিকে থাকাই দায় হয়ে গেছে এই পরিবারটির।
সালমা বলেন, ২০২০ সালে যখন লকডাউন হয়, তখন ঈদের পরই স্বামীর চাকরি চলে গেছে। রোজার ঈদে তাকে মাত্র ৩ হাজার টাকা বেতন দেয়া হয়েছিল। এরপর বাকি দুই মাসের বেতন আর দেয়নি। আমাদের ছোট একটি ব্যবসা ছিল। সেটা একটু চলছিল। কিন্তু লকডাউনের জন্য পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বাড়িওয়ালা পুলিশ নিয়ে আসবে, মালিক সমিতির কাছে বিচার দেবে। বিভিন্ন ধরনের বিড়ম্বনা তো আছেই। ঋণগুলো শোধ করতে পারছি না, এদিক থেকে আমাদের অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
ইরিন সুলতানা রাজধানীর উত্তরা উয়াইড ভিশন স্কুলে চাকরি করতেন। করোনায় চাকরি হারান পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম তিনি। মানবেতর জীবনযাপন করছেন ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে।
তিনি বলেন, কিছুদিন পরই জানানো হলো যে চাকরি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে আমাদের। কোনো বেতন দেয়া ছাড়াই। তখন একদম আয়ের উৎস বন্ধ। আমি কোনো টিউশনিও করতে পারছি না। আবার অন্য ক্ষেত্রেও বন্ধ।
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে অনেক পরিবারে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক, ইউএন উইমেন বাংলাদেশ এবং নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘কোভিড-১৯-এ জনমিতিক ও আর্থসামাজিক পরিবর্তন: নতুন পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ে গবেষণা রিপোর্টে উঠে এসেছে- মাসিক আয় কমেছে ৭৭ শতাংশ পরিবারে, চাকরি হারিয়েছেন ৩৪ শতাংশ, মাসিক সঞ্চয় কমে গেছে ৬২ শতাংশ, ঋণ বেড়েছে, ৩১ শতাংশ, চাকরি বা উপার্জনের সুযোগ হারিয়েছে ৬১ শতাংশ। প্রবাসীদের ক্ষেত্রেও এ চিত্র ভয়ানক, বিদেশ ফেরত ৪৪ শতাংশ এখনো কোনো কাজ পাননি।
ব্র্যাকের সিনিয়র পরিচালক কে এম মোর্শেদ বলেন, ঋণ বেড়েছে, সঞ্চয় কমেছে। কারো কারো সম্পদ বিক্রি করে বা বন্ধক রেখে চলতে হয়েছে। যারা ঢাকায় চাকরি করতেন ফেরত গেছেন, যারা বিদেশ চাকরি করতেন ফেরত এসেছেন। তারা বলছেন, তারা সমাজের কাছে পরিবারের কাছে হেয় হচ্ছেন; এক ধরনের চাপের মধ্যে আছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরোনো বেকারের সঙ্গে নতুন কর্মহীন মানুষের জীবন রক্ষায় কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকারকে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
গ্রামে ফিরে যাওয়া মানুষগুলো যাতে কৃষিকাজের পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক শিল্পে ফিরতে পারে সেজন্য প্রণোদনা দেয়ার পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞরা।
মন্তব্য করুন