ঢাকা , শনিবার, ২০২৪ নভেম্বর ২৩, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
#

মুক্তমত

মনের ক্যান্সার

নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২০২১ মার্চ ০৪, ০৩:৫৬ অপরাহ্ন
#
ক্যান্সার কি? দেহে কোষগুলোর স্বাভাবিক ধর্ম হলো তা নির্দিষ্ট সময় পর মারা যায় এবং মৃত কোষগুলো নতুন কোষ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। কিন্তু যখন এই সাধারণ ধর্মের ব্যতিক্রম ঘটে, সমস্যার সৃষ্টি হয় তখনই। অর্থাৎ, কোষগুলো নির্দিষ্ট সময়ে মারা না গিয়ে যখন বারংবার বিভাজিত হতে শুরু করে, তখন তা ক্যান্সারে রূপ নেয়। ক্যান্সারের একটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এটা খুব দ্রুত শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মনের ক্যান্সার হলো – হিংসা বা ঈর্ষা। হিংসা কি? কোনো ব্যক্তিকে আরাম আয়েশ বা প্রাচুর্যপূর্ণ অবস্থায় দেখে তার সে নেয়ামত দূরীভূত হয়ে নিজের জন্যে হাসিল হওয়ার কামনা করাই হিংসা। একটি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করি – ফেরেশতাদের নেতা ইবলিশ। প্রচুর ইবাদাত – বন্দেগীর ফলাফলস্বরূপ সে জ্বীন হওয়া সত্ত্বেও ফেরেশতাদের সর্দার হলো। এরপর একদিন আল্লাহ তা’আলা হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন। তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকে আদেশ করলেন সৃষ্টির সেরা আদমকে সিজদা করতে। প্রত্যেকেই স্রষ্টার এই আদেশ নির্দ্বিধায় মেনে নিল। মানতে পারল না কেবল ইবলিশ! এখন প্রশ্ন আসে, সে কেন তার স্রষ্টার আদেশ অমান্য করল? কারণ, তার মধ্যে জন্ম নিয়েছিল হিংসা। মাটির তৈরি একটি সামান্য প্রাণীর এত সম্মান সে সহ্য করতে পারে নি। এই হিংসা থেকে জন্ম নিল অহমবোধ। সে নিজেকে আদম থেকে শ্রেষ্ঠ ভাবতে শুরু করল। কারণ, সে তো আগুনের তৈরি, আর আদম সামান্য মাটির! আর এই অহমবোধ তার মধ্যে সৃষ্টি করল ক্রোধ! যার বহিঃপ্রকাশস্বরূপ সে আক্রমণাত্মক ও প্রতিশোধ–পরায়ণ হয়ে ওঠল। রাগান্বিত অবস্থায় সাংঘাতিক শপথও নিয়ে নিল সে! সৃষ্টির সেরা মানুষ, যাকে স্রষ্টা এত সম্মান দিয়েছেন, তাকে সে কখনোই সুপথে চলতে দেবে না। মানুষকে স্রষ্টাবিমুখ করে রাখাই তার একমাত্র উদ্দেশ্য! সুতরাং, দেখা যাচ্ছে, হিংসা বা ঈর্ষা থেকে আরও অনেক রিপুর আবির্ভাব ঘটছে। ক্যান্সার যেমন এক অঙ্গ থেকে অন্য অঙ্গে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি হিংসা বা ঈর্ষা থেকে জন্ম নেয় অন্যান্য পাপ। তাই এই ব্যাধিকে বলা হয়েছে “মনের ক্যান্সার”। হিংসা মানুষের সব সৎকর্মকে নিষ্ফল করে দেয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর একটি হাদিস আছে, ‘হিংসা নেকিসমূহকে এমনভাবে জ্বালিয়ে দেয়, যেমন আগুন শুকনো লাকড়িসমূহকে জ্বালিয়ে দেয়।’ (আবু দাউদ)। কারো সাফল্য বা উন্নতি দেখে হিংসা করা মানে আল্লাহর দানের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করা। কেননা, তার এই সাফল্য বা উন্নতি তো পরম স্রষ্টারই নেয়ামত! আমরা নিজেদের সৎকর্মকে সর্বোচ্চ রূপ দেওয়ার জন্যে হিংসা থেকে দূরে থাকব। স্রষ্টার কাছে এই প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের সব সৎকর্মকে কবুল করেন এবং সৎপথে চলার তৌফিক দান করেন। লেখা:জুলকার নাঈন সাদমান
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video