রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ৫টি ইউনিয়ন ভুমি অফিস ও উপজেলা ভুমি অফিসে চলছে লাগামহীন ঘুষ দুর্নীতি। অহরহ অভিযোগ থাকলেও ভুমি মন্ত্রনালয়ের কোন মাথা ব্যাথা নেই। সাধারন জনগনের অভিযোগ, ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ও অফিস সহকারীরা। যার কারণে প্রতিনিয়ত ভূমি অফিসে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সেবা গ্রহীতাদের। সরকারি ফি ছাড়া অতিরিক্ত টাকা না দিলে কাজ তো দূরের কথা সেবা নিতে আসা লোকজনের সঙ্গে কোনো কথায় বলতে নারাজ তারা। লাগামহীন দুর্নীতি চলছে ভূমি খাতের সাবরেজিস্ট্রার অফিস, এসিল্যান্ড অফিস ও তহসিল অফিসের সর্বক্ষেত্রে। এসব অফিস দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। সবগুলো অফিসের সামনে সিটিজেন চার্টার টানানো আছে, দেখার অনেক লোক আছে কিন্তু এগুলো মানার কেউ নেই। শুধু লোক দেখানোর জন্য টানানো। অফিস সুত্রে আরও জানাগেছে, সেবা গ্রহীতা আবেদনারীর কাছ থেকে কম্পোজ বাবদ ২শ টাকা, তহসিলদার প্রস্তাব প্রেরনের জন্য ১৫শ টাকা, কানুনগো তথ্য যাচাই বাচাইয়ের জন্য ৫শ থেকে ১হাজার টাকা, এসি ল্যান্ড থেকে চুড়ান্ত স্বাক্ষর হবার পর বা অনুমোদনের পর অফিস সহকারী নাজিরকে দিতে হয় ৩২শ থেকে ৩৬শ টাকা। যেখানে সরকার অফিসের সামনে টাঙ্গানো সিটিজেন চার্টার হলপ করে লেখা হয়েছে সর্বমোট ১১শ ৭০ টাকা কিন্তু এর পরিবর্তে প্রতিটি নামজারিতে খরচ বাবদ নেয়া হচ্ছে ৭-৮ হাজার টাকা। আবার অনেক ক্ষেত্রে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। এসব অফিসে কিছু সৎ ও নিষ্ঠাবান অফিসার থাকলেও প্রকান্তরে তারা অসৎ অফিসার বা শক্তিশালী দালাল চক্রের কারণে কোনঠাসা হয়ে থাকেন। তারা দৃশ্যমান কোন ভূমিকা রাখতে পারে না। খোজ নিয়ে জানাগেছে, রানীর হাটস্থ ঘাঘড়া ইউনিয়ন ভুমি অফিস, তারাচরণ হাট ইউনিয়ন ভুমি অফিস, শিলক ইউনিয়ন ভুমি অফিস, পোমরা ইউনিয়ন ভুমি অফিস, রাজার হাটস্থ ইউনিয়ন ভুমি অফিস ও উপজেলা ভুমি অফিসের ঘুষ দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র ২৪ এর বৈষম্য বিরোধী গণ আন্দোলনের পরেও প্রতিযোগিতা মুলক বেড়ে চলছে প্রতিদিনের চিত্র। স্থানীয় বাসিন্দা ভুক্তভোগী কয়েকজন এই প্রতিবেদককে জানান, একটি জায়গা খারিজ করার জন্য কারো কাছে দশ হাজার, আবার কারো কাছ থেকে পনের হাজার টাকা চেয়েছেন। শুধু তাই নয় টাকা নিয়েও অনেক সময় ঠিকমত কাজ না করে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে তাদেরকে। মাসের পর মাস অফিসে ঘুরতে হয়েছে। ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী দুজনে মিলে ভাগ ভাটেরা করে লুটেপুটে টাকা খাওয়ার পরও নাকি বহুদিন ঘুরিয়েছেন। এতে করে তাদের কষ্ট ও সময় দুইটা ক্ষতি করেছেন। যাহা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। এরা আরও অভিযোগ করে বলেন, এসব অফিসে কোন সেবার জন্য গেলে অফিসের নাকি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্রের ভাবখানা দেখলে মনে হয় তারা জমির মালিক বা রাজা। আর সেবা প্রত্যাশীরা জমির প্রজা বা হুকুমের গোলাম। এক্ষেত্রে নিয়মমাফিক কাজ করতে গেলে প্রতিপদে হেনস্তা হতে হয় এবং এক সময় বাধ্য হয়ে দালাদের দারস্থ হতে হয়। তারা ঘুষকে বকশিশ বা অতিরিক্ত পারিশ্রমিক বলতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে এবং এটাকে তারা বৈধ আয় মনে করেন। চন্দ্রঘোনা কদমতলী গ্রামের মুন্সি এনাম জানায়, সে তার জমি খারিজ করতে আসছিলাম। ২৪ শতাংশ জমির জন্য ২৩ হাজার টাকা চেয়েছেয়। পরে খারিজ না করে চলে যায়। তাছাড়াও টাকা নেওয়ার পর নাকি অফিসে তাদের ঠিক সময় মতো পাওয়া যায়না। তিনি আরও জানান, একটি নামজারি নিয়মমাফিক দাখিল করা হলে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়, পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে উপরোক্ত বকশিশের বিনিময়ে সমাধা করতে হয়। নামজারি ও খাজনা ডিজিটাল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ করা যায়নি। তহসিল অফিসে ৫-১০ টাকার খাজনা পরিশোধ করতে গিয়ে বাধ্য হয়ে ১০০-৫০০ টাকা বকশিশ দিতে হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে কেউ অভিযোগ করলে তিনি প্রকারান্তরে কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার আশঙ্কায় থাকে এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাও যদি দুর্নীতিপ্রবণ হন, তাহলে সেবা প্রত্যাশীর অবস্থা সেই রাজার দুধের গল্পের মতো পানসে মনে হাওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। আদালতের রায় ডিগ্রী মুলে পাওয়া নামজারি অর্থাৎ আবেদনকারী সেবা গ্রহীতার কাছ থেকেও নেয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। যেখানে টাকা নেয়ার কথা নেই। গোছরা থেকে এক ব্যাংক কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, জমির খারিজ কিংবা খসড়া’র জন্য আসলে আগেই বলে একশ-দুইশ টাকা দাও। টাকা দিলে পরে কথা বলে। ১৪৪ ধারা মামলার রিপোর্টের জন্য আসলে টাকা ছাড়া রিপোর্ট করে না। অফিস প্রধান ও অফিস সহকারী টাকা ছাড়া বিকল্প কিছু বুঝে না। কয়েক দিন আগেও আড়াই হাজার টাকার কাজ ৬ হাজার টাকা দিয়ে করিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নাই। তাদের হাতে রাঙ্গুনিয়ার মানুষ জিম্মি হয়ে আছে। সরেজমিনে আরও জানাগেছে, ভুমি অফিসে যারা চাকরি করে তারা করেনা এমন কোন কাজ বাকি থাকেনা। খাজনা আদায়, জমি রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, জমির শ্রেণী পরিবর্তন, ভূমি অধিগ্রহণে চেক জালিয়াতি, নীতিমালা ভঙ্গ করে জমি বরাদ্দ দেওয়া, জলমহাল, বালুমহল ইজারাসহ এদের বিরুদ্ধে নানা ক্ষেত্রে অবাধ দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, উদাসীনতা ও দুর্নীতিপরায়ণ মানসিকতার কারণে জনসম্পৃক্ত অতিগুরুত্বপূর্ণ এই খাতের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এসব অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ভূমি খাত দুর্নীতির বিষবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, দিন দিন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার লোভ-লালসার কারণে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে শুরু করে ইউনিয়ন ভূমি অফিস পর্যন্ত দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। এর বিনিময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ, সম্পদ ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে জমির মালিক হয়েছেন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসব অনিয়ম দূর করার জন্য ভূমির সব কাজে শতভাগ স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। নীতি ও আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে সব কাজ করা উচিত। ভূমি ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের মাধ্যমে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি অফিসে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা শুধু ডিজিটালাইজড করলেই হবে না, তবে সংশ্লিষ্টদেরও সৎ ও নৈতিক মানসম্পন্ন হতে হবে। হয়রানি নয়, সেবার মনমানসিকতা থাকতে হবে। একইসাথে ভূমি খাতের দুর্নীতির বিষবৃক্ষ উপরে ফেলার জন্য জিরো টলারেন্স নীতি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন ও দরকার। এব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারজান হোসাইন জানান, সরাসরি ভূমির মালিকরা অফিসে আসেন না, তারা কিছু শ্রেণীর দালাল বা মুন্সির মাধ্যমে আসে, এরা কি বা কন্টাক করে আসে তা আমাদের ভাবার বিষয় নয়। কিন্তু কে আসল বা দালাল মুন্সি আমিতো চিনি না। আমার জানা মতে সরকারী নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়না। অফিসের এরখম কারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে সরাসরি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন