ঢাকা , বুধবার, ২০২৫ জুলাই ৩০, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২
#

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

হাটহাজারীতে সম্পত্তি নিয়ে ভাই-বোনের বিরোধে প্রাণ গেল অন্তঃসত্ত্বা সন্তানের

জাহেদুল আলম জাহিদ, হাটহাজারী প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম।
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২০২৫ জুলাই ১০, ১২:৫৭ অপরাহ্ন
#

হাটহাজারীতে বোনের সম্পত্তির লোভে কাতার প্রবাসী ছোট ভাইয়ের মারধরে বড় বোন ও শাশুড়িকে বাঁচাতে গিয়ে মামা শ্বশুরের মারধরে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূর আগত সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।

মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে ১৩ জুন শুক্রবার রাত দশটার দিকে উপজেলার চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডস্থ জান আলি চৌধুরীর বাড়িতে।

ঘটনার পর দীর্ঘ ২৫ দিন চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার দুপুরে গুরুতর আহত হোসনে আরা বেগম (৬০)-কে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। নিহত ওই বাড়ির মৃত ইমাম শরীফের মেয়ে।

সরেজমিনে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহতের ছোট ভাই কাতার প্রবাসী আমির হোসেন (৫৫) ও তার স্ত্রী মুন্নি আক্তার (৪৫) ঘটনার দিন রাত দশটার দিকে নিহত এশার নামাজ শেষে দোয়া করাকালে ঘরে ঢুকে জলন্ত আগরবাতি জ্বালানোর অজুহাত দেখিয়ে তাকে লাঠি দিয়ে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক মারধর করে।

ঘরের নিজ রুমে থাকা তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূ রোশা আক্তার (৩২) শাশুড়িকে বাঁচাতে গেলে এক পর্যায়ে তার বুকে ও পেটে সজোরে লাথি মারতে থাকে। বউ-শাশুড়ি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ছেলে আরফাত (২১) সহ বেধড়ক মারধর করে।

এদিকে বাড়ির কিনারায় নিহতের আলি আকবর নামে আরেক ছোট ভাই, নিহতের ছেলে আলি হোসেন ঘরে গিয়ে দেখে তার মা অজ্ঞান ও স্ত্রী ব্যথায় ছটফট করছে। তাদের উদ্ধার করে হাটহাজারী সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। গুরুতর আহত ষাটোর্ধ্ব মাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে আইসিইউতে নিয়ে যান।

এদিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা যায়, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর তিন মাসের পেটের বাচ্চা মারা যায়। আহত বৃদ্ধা হোসনে আরা বেগম বিশ দিন পর অবস্থার আরও অবনতি হলে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিলে পুনরায় চমেকের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরে মঙ্গলবার মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে পুত্রবধূ রোশা আক্তার বলেন, নিহত নিজ রুমে নামাজ শেষে তসবিহ পড়ছিলেন। হঠাৎ চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন অভিযুক্তরা তাকে মারধর করছেন। লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করছেন। মাটিতে ফেলে তাকে পা দিয়ে চেপে ধরছেন। বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়।

ঘটনার তিন দিন পর পরীক্ষা শেষে জানতে পারলেন তার তিন মাসের সন্তান মারা গেছে।

ঘটনার সূত্রপাত হিসেবে বলেন, পৈত্রিক সম্পত্তির ভিটায় বসবাস করাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার শাশুড়ির। সব সময় আমির হোসেনের স্ত্রী মুন্নি বেগম জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য ধমকির পাশাপাশি না গেলে মেরে ফেলার হুমকি দিতেন। তার প্রবাসী স্বামীও মোবাইলে বহুবার বাড়ি না ছাড়লে সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন।

নিহতের তিন সহোদর মনোয়ারা বেগম, রওশন আরা বেগম ও ছেমন আরা বেগম এবং বড় ভাই মো. হোছেন (৬৮) তাদের বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে বলেন, ঘটনার আগে তাদের খুনি ভাই ও ভাইয়ের শালা এবং তার স্ত্রী বাড়ির চারদিক ঘুরে অবস্থা বুঝে হামলা চালিয়েছে।

প্রায় ৪০ বছর যাবৎ নিহত পৈত্রিক জায়গায় স্বামী নিয়ে বসবাস করে আসছেন। ঠিক তখন থেকেই আমির হোসেন পরবর্তীতে তার স্ত্রীসহ ওই জায়গা ভোগদখলের জন্য একের পর এক হুমকি দিয়ে আসছেন।

স্থানীয়ভাবে আগেও এ নিয়ে সালিশ হয়েছে। চলতি বছরের রমজানের আগে কাতার থেকে বাড়ি এসেই হুমকির মাত্রা বেড়ে যায়, যার সমাপ্তি ১৩ জুন রাতে হয়।

তারা জানান, যতটুকু সংবাদ পেয়েছি, ঘটনার একদিন পর কাতার পাড়ি জমিয়েছেন অভিযুক্ত আমির হোসেন। অন্য অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছেন অন্য কোথাও।

হত্যায় অংশ নিয়েছেন আমির হোসেন, তার স্ত্রী মুন্নি বেগম, তাদের পুত্র আরফাত হোসেন এবং প্রত্যক্ষ মদদদাতা আলি আকবর, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ক্যাডার প্রধান আসামির শালা, অস্ত্র মামলার আসামি সালাউদ্দীন লিটন। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানান তারা।

এদিকে ঘটনার পর পৃথক সময়ে হাটহাজারী মডেল থানায় নিহতের পুত্রবধূ এবং চট্টগ্রাম আদালতে তার পুত্র অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

মামলার সত্যতা স্বীকার করে মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবু কাওসার মাহমুদ হোসেন বলেন, “আসামি আটকে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।”

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video