প্রাইমারিতে লেখা পড়া নেই, কোরআন-হাদিস জানা নেই, আরবি-বাংলা উর্দু কিছুই পারেন না। তারপরেও নাকি তিনি আল্লাহর অলি দাবি করে ভন্ড আজাদ। ইদানীং গীতিকার এবং লেখকও নাকি তিনি পরিচয় দেন। মাইজভাণ্ডার দরবারের মুরিদান, নিজের জন্মদিনে নিজে দেন ফাতেহা। গরু জবাই করে তবারুক রান্না করে খাবান কিছু এলাকাবাসীকে।
স্বপ্নে পাওয়া ফকির আজাদের নেই কোনো কোরআন হাদিসের জ্ঞান। ঝার-ফুক আর হাত বুলিয়ে সর্বরোগের মহৌষধ দেন। এই হচ্ছে আমাদের আজাদ ফকির।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার প্রাণকেন্দ্রের জাকিরাবাদ গ্রামে তার আস্তানা। পিতা একজন জেবল হোসেন রিকশা চালিয়ে অভাবের সংসার টানতেন। আজাদের তেলেসমাতি কারিশমায় এখন আর টাকা-পয়সার অভাব নেই। প্রতিনিয়ত টাকা আসে তার কাছে।
যতটুকু জানা গেছে, ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে জাকিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিশ্ব আল্লাহর অলিদের মতো তাকে নাকি স্বপ্ন দেখিয়েছে। সব নাকি পেয়ে গেছেন, কথাটা বলেছেন তৎকালীন তার স্কুলের স্যারদের। স্যারদের মিষ্টি দিয়ে বললেন, এগুলো ফুক দিয়ে তৈরি করেছেন তিনি, তখন স্কুলের স্যার রহস্যকরে বললেন, এই মিষ্টির প্যাকেটে তো প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা আছে। এর পর স্কুল ছেড়ে পালালেন।
এলাকাবাসী তরুণ প্রজন্মের ইসলাম শিক্ষা চর্চা করেন এমন কয়েকজন আলেম বললেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, আল্লাহর অলী হতে শরিয়ত-তরিকতের জ্ঞানসহ কঠিন সাধনার মাধ্যমে একজন অলির বহুমুখী গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত ও মুসতাহাবের জ্ঞান জানা থাকতে হবে।
তার সাথে সুদ, মদ, মিথ্যা বলা, নানা অপরাধমূলক কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। কিন্তু এসব কিছুই তার মধ্যে নেই। আছে শুধু ভণ্ডামী। ধর্মের আড়ালে ব্যবসা ছাড়া আর কিছু নয়। কখনো নিজেকেই বাবাজান বলে আখ্যা দেয়া এটা অপরাধ। যার কারণে তিনি একজন ভন্ড ছাড়া আর কিছু নয়।
নিজেকে কখনো পীর, কখনো অলি, কখনো গীতিকার, কখনো লেখক, কখনো দরবারে আজিজিয়ার সাজ্জাদানশীন পরিচয় দেয়া, এটা একমাত্র ধর্ম ব্যবসার কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। এলাকাবাসীরা জানান, তিনি কখনো নামাজও পড়েন না। মাঝে মাঝে খেলার মাঠে ক্রিকেট-ফুটবল খেলেন।
এই ভন্ডামী বন্ধের প্রতিবাদে গতকাল ২৬ জানুয়ারি রবিবার সমাবেশ করে স্থানীয় জনতা। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সদরে ইছামতি কমিউনিটি সেন্টারের সামনে সকাল ১১টায় উপস্থিত সকলে প্রতিবাদ সমাবেশে বলেন, এই ভন্ড অলির ব্যাপারে এলাকার যুবক মো. আকবর ইসলাম ধর্ম নিয়ে আজাদ ফকিরের ব্যবসার প্রতিবাদ করলে ভন্ডের অনুসারীরা এখন হুমকি দিচ্ছে আকবরের নামে চাঁদাবাজি মামলা দেয়ার। একথা প্রচারের পর অর্ধশতাধিক যুবক প্রতিবাদের ঝড় তোলেন। অচিরেই আজাদ ফকিরের ভন্ডামী বন্ধ করার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়ে সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন শেষে সমাবেশে উপস্থিত বক্তব্য রাখেন মুহাম্মদ সোহেল, মুহাম্মদ আলী, মুহাম্মদ খোকন, হাফেজ নুরুর আমিন, ডা. আবু তাহের, শাহ আলম, মুহাম্মদ সেলিম, মুহাম্মদ ইয়াকুব, মুহাম্মদ হারুন, মুহাম্মদ রাসেল, হালিমা বেগম, বালি বেগম, সাজু আক্তার, তানিয়া আক্তার প্রমুখ।
মন্তব্য করুন