চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় গত দুই বারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বীতাহীন হলেও রাজনৈতিক নানা কারণে এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন জাবেদ- ওয়াসিকার জন্য প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাড়িয়েছে। আগামী ২৯ মে তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রাম আনোয়ারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এদিকে নির্বাচনের আর মাত্র ১০ দিন বাকী থাকতে শেষ মুহুর্তে এসে সাবেক ভূমিমন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ আস্থা রেখেছেন গত দুই বারের উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী উপর। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মান্নান চৌধুরীকে বসিয়ে তৌহিদুল হক।
চৌধুরীকে বিজয় করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন তিনি। উপজেলা নির্বাচন কার্যলয় সূত্রে জানা যায়, এবারের চেয়ারম্যান পদে তৌহিদুল হক চৌধুরী (দোয়াত কলম) , অধ্যাপক এম.এ মান্নান চৌধুরী (মোটরসাইকেল) , কাজী মোজাম্মেল হক (আনারস) প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
জানা যায়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও আওয়ামী লীগের সর্মথনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই পরপর দুইবার আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তৌহিদুল হক চৌধুরী। তার প্রত্যাশা ছিল এবারও তিনি শুরু থেকে সমর্থন পাবেন। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সার্সন রোডস্থ বাসভবনে গত পহেলা মে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বটতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মান্নান চৌধুরীকে প্রার্থী ঘোষণা করেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য।
এদিকে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের প্রচরণার চেয়ে আওয়ামী লীগের দুই প্রভাবশালী পরিবার আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ও আতাউর রহমান খান কায়ছার এই দুই পরিবারের ক্ষমতা ধরে রাখার দৌরাত্ম্য বেড়েই চলছে। মাঠ প্রচরনায় একে অপরের বিরুদ্ধে পরোক্ষভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আর এর নেপথ্য কারণ বর্তমান অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। তিনি সমর্থন দিয়েছেন আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হককে। সব মিলিয়ে খুব অল্প সময়ে তিনি একটি শক্ত ভিত তৈরি করেছেন। এই অবস্থায় আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন সাবেক ও বর্তমান দুই মন্ত্রীর প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাড়িয়েছে।
দেখা যাচ্ছে বর্তমান অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের একক প্রার্থী থাকলেও বাবু পরিবার সমর্থিত দুই প্রার্থী হওয়ায় অনেকটা এই পরিবার থেকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ শূন্য হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ফলে এই দুই প্রার্থীকে নিয়ে আনোয়ারার বাবু পরিবারের নেতাকর্মীদের সমন্বয় করার উদ্যোগ নেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। এনিয়ে ২১ মে সন্ধ্যায় সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সার্সন রোডস্থ বাসভবনে বর্তমান চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মান্নান চৌধুরীসহ স্থানীয় নেতাকর্মীদের সমন্বয় করেন। সেখানে নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে তৌহিদুল হক চৌধুরীকে নতুন করে সমর্থন দেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী ও আরেক প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মান্নান চৌধুরী। এসময় মান্নান চৌধুরীসহ সকলকে নেতাকর্মীদের সমন্বয় করে তৌহিদুল হক চৌধুরীকে সমর্থন দিতে বলেন। তৌহিদুল হক চৌধুরীকে বিজয় করতে এক যোগে সবাইকে কাজ করতে নির্দেশনা দেন তিনি। ফলে ত্রিমুখী লড়াই থেকে এখন উপজেলা নির্বাচন হবে দ্বিমুখী লড়াইয়ে।
এদিকে জাবেদের নির্দেশনা শুনার জন্য সন্ধ্যা থেকে বাসবভনে হাজার হাজার নেতাকর্মী জড়ো হতে থাকেন। ঘোষণার পর পর নেতাকর্মীরা সাবেক এই মন্ত্রী জাবেদকে ওনার প্রার্থীর জন্য এক সাথে কাজ করার আশ্বাস দেন। ওনার সিন্ধান্তকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে জানান নেতাকর্মীরা। সব শেষ আগামী ২৯ মে হবে দুই প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বীতার মাধ্যমে দুই পরিবারের ভোটের লড়াই। আর ভোটের লড়াইয়ে বিজয় মিছিল কারা বের করবে তা নিশ্চিত করবে ভোটাররা।ভোটারদের রায়ের মাধ্যমে আগামী ২৯ মে নিশ্চিত হবে তৌহিদুলের হেট্রিক নাকি মোজাম্মেলের অভিষেক।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পিতা মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বর্তমান অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এর পিতা মরহুম আতাউর রহমান খান কায়সার ছিলেন দলের সাবেক কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক, সাবেক রাষ্ট্রদূত।
মন্তব্য করুন