ঢাকা , বুধবার, ২০২৫ এপ্রিল ০২, ১৯ চৈত্র ১৪৩১
#

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় মাদক ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে চাঞ্চল্য

এনামুল হক নাবিদ, আনোয়ারা প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম।
প্রকাশিত : শনিবার, ২০২৫ মার্চ ২২, ১২:২৩ অপরাহ্ন
#

ট্টগ্রামের আনোয়ারায় মাদকের টাকার দ্বন্দ্ব নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীর ছুরিকাঘাতে মোহাম্মদ মানিক নামে এক যুবক হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনার পর থেকে মাদক কারবারিদের ধরতে জোট বেঁধেছে স্থানীয়রা, নড়ে চড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসনও।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে মানিকের নামাজের জানাজা শেষে মাইকে ঘোষণা দিয়ে আসামি রাসেল ও নয়নের বসতঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।

বুধবার সকালে সরেজমিনে পরৈকোড়া ইউনিয়নের ছত্তার হাট, মাহাতা এলাকায় গিয়ে জানা যায়, মিন্টু ও রাসেল দুই ভাই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের প্রভাব খাটিয়ে মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। মাদক ব্যবসায়ী মিন্টুর তত্ত্বাবধানে মাদক পাচার করতো নিহত মানিক। সে সুবাদে মিন্টুর ছোট ভাই রাসেলের সাথেও কাজ করতো মানিক। তাদের নিরাপত্তা ও আইনি বিষয়ে রাজনৈতিকভাবে দেখভাল করতেন আনোয়ারা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক কফিল উদ্দিন মাহমুদ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কফিলের ছত্রছায়ায় অবৈধ বালু উত্তোলন, জায়গা দখল, ইয়াবা ব্যবসা, মদ ব্যবসাসহ ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি গ্রুপ গড়ে ওঠে। সেই গ্রুপে মাদক সরবরাহ করতো মিন্টু ও তার ভাই রাসেল। রাসেল যুবলীগের ক্ষমতা ব্যবহার করে অস্ত্রের মহড়া, গরু লুট, গাড়ি চুরি, অপহরণ, সরকারি কাজ থেকে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, মিন্টু ও রাসেলের নেতৃত্বে পুরো সমাজ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। মদ খেয়ে মাদকাসক্তরা মানুষকে মারধর করতো। এমনকি মদ খেয়ে রাসেল নিজের স্ত্রীকেও মারধর করতো, যার ফলে তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেন।

আনোয়ারা থানা সূত্রে জানা যায়, রাসেল, নয়ন ও মানিক—তারা সবাই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলো। তাদের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। রাসেল বিগত কয়েক বছরে মারামারি সংক্রান্ত মামলায় একাধিকবার আসামি হয়েছে। মানিক হত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দুপুরে তার ভাই মোহাম্মদ বাবু বাদী হয়ে দুজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ২-৩ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহত মানিক পরৈকোড়া ইউনিয়নের ভিংরোল গ্রামের সৈয়দের ছেলে।

আসামিরা হলেন মাদক ব্যবসায়ী যুবলীগ ক্যাডার মোঃ রাসেল (৩৬) ও তার সহযোগী মোঃ নয়ন (৩২)।

নিহতের ভাই মোহাম্মদ বাবু জানান, মাদক ব্যবসায়ী মিন্টুর সাথে মানিকের ভালো সম্পর্ক ছিলো, যা থেকে তাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। গাড়ির হেলপার থাকাকালীন রাসেলের সাথেও সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে রাসেল তাকে লাইনম্যানের কাজের সুযোগ দেয়। এরপর গত সোমবার রাতে পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে হত্যা করে মানিককে। রাসেল অস্ত্র মামলা সহ বিভিন্ন মামলার আসামি। মাদকের রাজত্ব কায়েম করেছে সে।

আনোয়ারা থানার ওসি মনির হোসেন বলেন, মানিক ও রাসেল উভয়েই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। রাসেলের নামে আনোয়ারা থানায় মানিক হত্যা মামলাসহ ৮টি মামলা রয়েছে। এ পর্যন্ত সে মাদকসহ একবার এবং অস্ত্রসহ মোট দুইবার গ্রেফতার হয়েছে। বর্তমানে সে ৭টি মামলায় জামিনে রয়েছেন।

ওসি আরও বলেন, রাসেলের বিরুদ্ধে আনোয়ারা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে হত্যার ঘটনার জেরে বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে আনোয়ারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video