ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের প্রধান সংগঠক মাস্টারদা সূর্যসেনের আজ জন্মদিন। তিনি ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২২ মার্চ (আজকের এই দিনে) চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তার পুরো নাম সূর্যকুমার সেন। ডাক নাম কালু। বাবা রাজমনি সেন এবং মা শশীবালা দেবী। স্থানীয় দয়াময়ী বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষার পর নোয়াপাড়া উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন তিনি।
সূর্যসেন যখন নোয়াপাড়া উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের ছাত্র, তখন বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে বাংলায় স্বদেশী আন্দোলন শুরু হয়। ক্রমে এই আন্দোলন বিপ্লবী আন্দোলনে রূপ নেয়। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে বিএ পড়ার সময় তিনি তার এক শিক্ষক শতীশচন্দ্র চক্রবর্তীর দ্বারা বৈপ্লবিক আদর্শে দীক্ষিত হন।
অধ্যাপক শতীশচন্দ্র চক্রবর্তী 'যুগান্তর' নামক বিপ্লবী দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সূর্যসেন চট্টগ্রামে ফিরে ব্রিটিশবিরোধী একটি বিপ্লবী দল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামে ফিরে তিনি বিপ্লবী 'যুগান্তর' দলকে পুনরুজ্জীবিত করেন। আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে তিনি ‘ন্যাশনাল স্কুল’-এ শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। শিক্ষকতা করার কারণে তিনি পরিচিত মহলে ‘মাস্টারদা’ আখ্যা পান।
চট্টগ্রামে তখন বিপ্লবী দলে কাজ করতেন আম্বিকা চক্রবর্তী, অনুরূপ সেন, নগেন সেন (জুলু সেন), চারুবিকাশ দত্তসহ আরও অনেকে। কিন্তু তাদের তৎপরতা ছিল সীমিত পর্যায়ের।
বাংলাদেশে বিপ্লবীরা তখন ‘অনুশীলন’ ও ‘যুগান্তর’ এই দুই দলে বিভক্ত ছিলেন। বহরমপুর থেকে ফিরে এসে সূর্যসেন ‘যুগান্তর’ দলে যোগ দিয়ে সংগঠনটিকে সক্রিয় করে তোলেন এবং বিবাদমান দুই দলকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন।
১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের জেলা কংগ্রেসের সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। এতে সূর্যসেন সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। একই বছর ১৩ সেপ্টেম্বর লাহোর জেলে একটানা ৬৩ দিন অনশন করে বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মারা যান। এর প্রতিক্রিয়ায় সারা বাংলায় প্রচণ্ড বিক্ষোভ দেখা দেয়। বিক্ষোভ মিছিল ও সভায় নেতা সূর্যসেন বিপ্লবের পরবর্তী কার্যক্রমের পরিকল্পনা সদস্যদের সামনে তুলে ধরেন। বিপ্লবীরা স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করার শপথ নেন। এর জন্য তারা ‘মৃত্যুর কর্মসূচি’ ঘোষণা করেন।
‘যুগান্তর’ দলের চট্টগ্রাম শাখার নতুন সভাপতি তারকেশ্বর দস্তিদার সূর্যসেনকে চট্টগ্রাম জেল থেকে ছিনিয়ে আনার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়। তারকেশ্বরের সঙ্গে আরও কয়েকজন গ্রেপ্তার হন।
১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে সূর্যসেন, তারকেশ্বর দস্তিদার এবং কল্পনা দত্তের বিশেষ আদালতে বিচার হয়। ১৪ আগস্ট সূর্যসেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসির রায় হয় এবং কল্পনা দত্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কারাগারে উভয়ের ফাঁসি কার্যকর হয়।
মন্তব্য করুন