চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় কর্ণফুলী নদী থেকে অবাধে চলছে বালু উত্তোলন। কোনোভাবেই কর্ণফুলী নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। এতে বাড়ছে নদী ভাঙন, বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। এজন্য প্রভাবশালী সিন্ডিকেটকে দুষছেন স্থানীয়রা।
সম্প্রতি রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় কর্ণফুলী নদীর ভাঙন পরিদর্শন করেন বন ও পরিবেশ উপদেষ্টার বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) একটি প্রতিনিধি দল।
বেলার প্রতিনিধি দল উপজেলায় সরফভাটার পাইট্টাইল্ল্যাকুল, গোডাউন, মরিয়ম নগর, দক্ষিণ ইছামতী, চন্দ্রঘোনা, কদমতলীর কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ভাঙন এলাকায় পায়ে হেঁটে পরিদর্শন করেন এবং নদী ভাঙনের শিকার মানুষের সাথে কথা বলেন।
স্থানীয়রা জানান, বিগত ১৬ বছর ধরে কর্ণফুলী নদী, শিলক খাল, ইছামতী নদীর বালু নিয়ন্ত্রণে ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদের ভাই এরশাদ মাহমুদ ও খালেদ মাহমুদ। তাছাড়া এরশাদ মাহমুদের শ্যালক ফয়সাল এন্টারপ্রাইজের নামে ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন করতো আওয়ামী লীগের লোকজন। বিগত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলেও থেমে নেই বালু উত্তোলন কার্যক্রম। পালিয়ে যাওয়া আ. লীগের নেতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এখন বালু তুলছেন বিএনপির প্রভাবশালী কয়েকটি সিন্ডিকেট।
স্থানীয়রা আরও জানান, পূর্বে ৮-১০টি বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন করলেও এখন অর্ধশতাধিক স্থান থেকে রাতদিন প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করছেন চক্রটি। প্রতিদিন প্রতিটি পয়েন্টে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকার বালু পাচারের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন বাণিজ্য হচ্ছে কয়েক কোটি টাকা। বালু ভর্তি ট্রাক চলাচলের কারণে সাধারণ পথচারীদের সীমাহীন কষ্ট হচ্ছে। প্রতিটি রাস্তা হয়ে পড়েছে চলাচলের অনুপযোগী। বালুভর্তি ট্রাকের অবাধ চলাচলে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পড়ছে নানা সমস্যায়। এ ব্যাপারে মাথাব্যথা নেই স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা ২০১০ আইনের সেতু থেকে ১ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকলেও সরফভাটার গোডাউন সেতুর ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ড্রেজার দিয়ে তোলা হচ্ছে বালু। এতে হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলার সাথে ৪ ইউনিয়নের একমাত্র সংযোগ সড়ক গোডাউন সেতু।
সেতুর খুব কাছে ড্রেজার বসিয়ে ৪০ ফুট গভীর করে বালু তোলার কারণে সেতুর পিলারের গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে গর্ত তৈরি হয়েছে। ফলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। তবে ইজারা বহির্ভূত এসব বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির কয়েকটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে প্রশাসনের নাকের ডগায় গোডাউন সেতুর পাশ ঘেঁষে বালু উত্তোলন করলেও স্থানীয় প্রশাসনের রহস্যজনক নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়ে সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। কিন্তু রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বালু উত্তোলন বন্ধ না করে বরং সিন্ডিকেটকে আরও অধিকহারে বালু উত্তোলনে উৎসাহিত করছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে পরিদর্শনে আসা বেলার চট্টগ্রাম নির্বাহী পরিচালক মুনিরা বেগম বলেন, কর্ণফুলী নদী দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি নদী। অবৈধ বালু উত্তোলনের নির্মমতার শিকার হয়েছে এই কর্ণফুলী নদী। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা যথেচ্ছভাবে বালু তুলছেন। এতে নদীর পাড় ভাঙন থেকে শুরু করে পানির গতিপথ বদলে যাওয়া ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বালু উত্তোলনের জন্য ইজারাকৃত স্পটগুলোর বাইরেও উপজেলার ৩টি নদীর অর্ধশতাধিক স্পট থেকে ইজারা বহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে নদী ও বসতি এলাকায় পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। আবার খোলা ট্রাকে বালু পরিবহনের কারণে বায়ুদূষণসহ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। যা লিখিত আকারে পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে।
মন্তব্য করুন