ঢাকা , মঙ্গলবার, ২০২৫ এপ্রিল ২২, ৯ বৈশাখ ১৪৩২
#

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আইন উপেক্ষা করে পটিয়ায় জমজমাট মাটির ব্যবসা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : বুধবার, ২০২৪ ডিসেম্বর ১৮, ০২:০৮ অপরাহ্ন
#

পটিয়ায় রাতের আঁধারে স্ক্যাভেটর দিয়ে অবৈধভাবে মাটি কাটার উৎসব চলছে। প্রশাসনের নীরবতার সুযোগে পরিবেশ আইন অমান্য করে কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে বিক্রি করছে একাধিক চক্র। জমি হতে কেটে নেওয়া মাটি ড্রাম ট্রাক দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার জায়গা, সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এতে জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়ছে। এভাবে মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। কৃষিজমির টপ সয়েল কেটে নেওয়ার ফলে ফলন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়।

আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি হতে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। উর্বর কৃষিজমি থেকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কিংবা উর্বর উপরিভাগের মাটি বিনষ্ট হলে, পরিবেশ, প্রতিবেশ বা জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি সাধিত হলে মাটি কাটা যাবে না। ড্রেজার বা স্ক্যাভেটরের মাধ্যমে বা অন্য কোনো কৌশলী প্রক্রিয়ায় বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। তাছাড়া উক্ত জমিসহ পার্শ্ববর্তী অন্য জমির ক্ষতি, চ্যুতি বা ধসের উদ্ভব হলেও ওই জমি থেকে মাটি কাটা যাবে না। পরিবেশ আইন অনুযায়ী কৃষিজমির মাটি কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১২-এর ৬ ধারা) অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট টিলা ও পাহাড় নিধন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্যদিকে ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ রয়েছে। দুই আইনে শাস্তির বিধান একই রকম। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকা জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। একই কাজ দ্বিতীয়বার করলে দায়ী ব্যক্তির ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও ১০ বছরের কারাদণ্ড হবে। এ ক্ষেত্রে এ কাজের সঙ্গে জড়িত জমি ও ইটভাটার মালিক উভয়ের জন্যই সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের ধর পাড়া সুনিল চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে গৈড়লা মৌজা এলাকা থেকে রাতের আঁধারে ১০ থেকে ১৫টি ড্রাম ট্রাক দিয়ে টপ সয়েল কেটে নিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড পাইরুল গ্রামের দোস্ত মুহাম্মদের ছেলে সাইফুল ইসলাম সাইফু বিএনপির নাম ভাঙিয়ে দেদারসে মাটি কাটছে। জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম তার কাছে মাটি কাটার অনুমোদন আছে বলে দাবি করেন।

এছাড়াও উপজেলার হাইদগাঁও, কেলিশহর, খরনা, কচুয়াই ইউনিয়নসহ বেশ কিছু এলাকা থেকে প্রতিদিন রাতের আঁধারে অবৈধভাবে কৃষিজমিতে স্ক্যাভেটর মেশিন দিয়ে কেটে মাটি ও বালু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সচেতন নাগরিক জানান, বিগত সরকারের আমলে সাবেক বিতর্কিত এমপি ও হুইপ শামশুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি -১ (পটিয়া)-এর বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান আলমগীর খালেদ ও তার ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ৪-৫ জনের একটি সিন্ডিকেট পটিয়ায় মাটির হরিলুটসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। সে সময় তারা সারা রাত থানায় বসে থেকে মাটি বিক্রি করতো।

দেশের পট পরিবর্তনের পর তারা আড়ালে থেকে কয়েকজন বিএনপি নেতাকে সামনে দিয়ে আবারও মাটির ব্যবসা জমজমাট করার চেষ্টা করছে। এই বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে উপজেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয় জনগণ।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্লাবন কুমার বিশ্বাস জানান, অবৈধভাবে রাতের আঁধারে মাটি কাটার অভিযোগ পেয়েছি। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে অনতিবিলম্বে আইনানুগভাবে মাটি কাটা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video