ঢাকা , শুক্রবার, ২০২৪ সেপ্টেম্বর ২০, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
#

দেশজুড়ে

তোফাজ্জলের চাচা ফজলুল হক বলেন, তোফাজ্জেলকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই

প্রিয়জনদের মৃত্যুতে মানসিক ভারসাম্য হারানো তোফাজ্জল গণপিটুনিতে নিহত


প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২০২৪ সেপ্টেম্বর ১৯, ০৩:০৮ অপরাহ্ন
#

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে আটক তোফাজ্জল (৩০) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।  

নিহত তোফাজ্জল প্রেমসংক্রান্ত ব্যাপারে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন।
কয়েক বছরের মধ্যেই তোফাজ্জলের মা, বাবা ও একমাত্র বড় ভাইও মারা যান। যার কারণে পরিবার ও অভিভাবকহীন হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতেন তোফাজ্জল।  

তোফাজ্জল পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের তালুকের চরদুয়ানী গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে। মানসিক ভারসাম্য হারানোর আগে তিনি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আরিফুজ্জামান আল ইমরান তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে এসব তথ্য জানান।

তোফাজ্জলের এমন মৃত্যুর খবর শুনে বরগুনার পাথরঘাটার কাঠালতলী ইউনিয়নে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

তোফাজ্জল বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বাংলা বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে বঙ্গবন্ধু ল কলেজে অধ্যায়নরত ছিলেন। এ অবস্থায়ই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন।

আরিফুজ্জামান আল ইমরান লেখেন, ‘তোফাজ্জল আমার জন্মস্থান বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার সন্তান। তোফাজ্জল পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। এই ছেলেটি বেশ সজ্জন, পরোপকারী ও নেতৃত্বগুণসম্পন্ন ছাত্রনেতা ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে প্রেমসংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় প্রথমে কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারান। এছাড়া খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে তোফাজ্জল তার মা, বাবা ও একমাত্র বড় ভাইকে হারান। তোফাজ্জল পরিবার ও অবিভাবকশূন্য হয়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিন থেকে চার বছর হলো। বিগত দুই থেকে তিন বছর তোফাজ্জল প্রায়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াতেন। আমাদের এলাকার যারা ওকে চিনতেন সবাই সহযোগিতা করতেন। ক্যাম্পাসে আমাকে দেখলেই দৌড়ে এসে কুশল বিনিময় করতেন। আমি দেখা হলে ওরে খাবার খেতে বলতাম বা খাওয়ার জন্য টাকা দিতাম অথবা ও মাঝেমধ্যে চেয়েও নিতেন। খাবার এবং খাবারের টাকার বাইরে ওর তেমন কোনো চাহিদা ছিল না।

হত্যার আগে ভাত খেতে দেওয়া হয় তোফাজ্জলকে-
তিনি আরও লেখেন, ‘হয়ত আজকেও খাবারের জন্য তিনি এফএইচ (ফজলুল হক মুসলিম) হলে গিয়েছিলেন। আজকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসিন হলের ছোট ভাই সাংবাদিক কবির কাননের ফেসবুক ওয়ালে তোফাজ্জলকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেখি যে তোফাজ্জলকে চোর সন্দেহে এফএইচ হলে আটক করেছে। আমি দেখামাত্রই ফোন করে তোফাজ্জলের বিষয়ে কাননকে অবগত করি যে ও আমার এলাকার ছেলে, আমি ওরে ব্যক্তিগতভাবে জানি, বর্তমানে ও মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। হয়ত খাবারের সন্ধানে তোফাজ্জল এফএইচ হলে গেছে। আমি কাননকে বলেছিলাম যারা এখন ওরে আটকে রেখেছে তাদের সঙ্গে তুমি কথা বলো, তোফাজ্জল যে মানসিক ভারসাম্যহীন এটা ওদের অবহিত কর, যাতে ওরে শারীরিকভাবে টর্চার না করে। কানন কিছুক্ষণ পরেই আমাকে ফোন দিয়ে জানায় ভাই ওরে আর কেউ টর্চার করবে না, তবে আপনি ওর কোনো অভিভাবককে পাঠান যার কাছে তোফাজ্জলকে দিয়ে দেবে, আমি সেই ব্যবস্থা করতেছি।  

এরপর আমি আমাদের এলাকার বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি এফএইচ হলে গিয়ে তাকে নিয়ে আসার জন্য কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাউকে ম্যানেজ করতে পারিনি। দুই ঘণ্টার ব্যবধানে ফেসবুকে দেখি তোফাজ্জল এফএইচ হলের শিক্ষার্থীদের নির্মম নির্যাতনে মারা গেছে।

ইমরান আফসোস প্রকাশ করে লেখেন, ‘আহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়! ছাত্র নামধারী বিবেকহীন এই নরপিশাচদের জন্য আজকে একটি নিরপরাধ প্রাণ চলে গেল, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলঙ্কিত হলো। তোফাজ্জলের হত্যার বিচার চাওয়ার মতো ওর পরিবারে অবশিষ্ট আর কেউ নেই। তবে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হলে আমি ব্যক্তিগতভাবে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচার নিশ্চিত করতে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়ে যাব। ’

এদিকে তোফাজ্জলের চাচাতো ভাই ফারুক হোসেন বলেন, আমরা আজ সকালে শুনেছি তোফাজ্জলকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এখন ঢাকা মেডিকেলে ময়নাতদন্তের জন্য নেওয়া হয়েছে। সঙ্গে আছেন চাচাতো ভাই শাহাদাত হোসেন। থানার আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হবেন। মরদেহ আনার পর জানাজা শেষে বাবা মায়ের পাশে দাফন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, তার বাবা আবদুর রহমান মারা গেছেন ২০১১ সালে, মা বিউটি বেগম মারা যান ২০১৩ সালে এবং ভাই নাসির উদ্দিন পুলিশের এএসআই মারা যান ২০২৩ সালে।  

তোফাজ্জলের চাচা ফজলুল হক বলেন, তোফাজ্জেলকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video