ঢাকা , মঙ্গলবার, ২০২৪ মে ১৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
#

জাতীয়

ট্রাফিক পুলিশ থেমে নেই তীব্র রোদেও


প্রকাশিত : রবিবার, ২০২৪ এপ্রিল ২১, ০৮:০৫ অপরাহ্ন
#

সারাদেশের মতো বগুড়াতেও জারি করা হয়েছে সতর্কবার্তা। জেলায় তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কড়া রোদ, তীব্র গরম, যানজট, উচ্চ শব্দের হর্ণ সব মিলিয়ে বিভীষিকাময় এক পরিস্থিতি শহরজুড়ে। এসবের মাঝেও নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। রোদের তীব্র উত্তাপেও সাধারণ মানুষ বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছে তখন তারা সড়কে দাড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।

রোববার (২১ এপ্রিল) শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের দায়িত্ব পালনের এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে।

ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বলছেন, এবারের মতো তাপপ্রবাহ এর আগে কখনও দেখেননি তারা। এমনিতেই বগুড়া শহরে প্রচণ্ড গাড়ির চাপ সামলাতে তাদের নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত শব্দ দূষণ থেকে শুরু করে বায়ু দূষণের শিকার হতে হয় তাদের। এর মধ্যে চলমান দাবদাহ তাদের কষ্টের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তবুও তারা শহরের সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

তবে রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক সদস্যরা পানি শূন্যতা, মাথাব্যথা ও শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছেন। অনেক ট্রাফিক সদস্যরা ডিহাইড্রেশনজনিত সমস্যায় ভুগছে। যেসব ট্রাফিক সদস্যের হাই-প্রেশার আছে তাদের এই গরমে দায়িত্ব পালন করতে আরও বেশি সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া ইউনিফর্ম পরে এ গরমে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আরও বেশি সমস্যা হচ্ছেন। আবার শহরের সাতমাথা ছাড়া অন্যকোথাও পুলিশ বক্স না থাকায় আরও ভয়াবহ গরমে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এমনকি তাদের বিশ্রাম নেওয়ারও সুযোগ নেই।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) শহরের ঠনঠনিয়া বাসট্যান্ড এলাকায় দায়িত্ব পালনের সময় ডিহাইড্রেশনে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মশিউর রহমান জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে তাকে সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি নিজ বাড়িতে বিশ্রামে আছেন।

শহরের সাতমাথায় দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক পুলিশের কন্সটেবল ৫৫ বছর বয়সী মইন উদ্দীন। কথা হলে তিনি বলেন, চাকরি জীবনে কখনও এত বেশি তাপমাত্রা দেখিনি। পুলিশের চাকরি করি। কষ্ট হলেও মানুষের স্বার্থে দায়িত্ব পালন করা আমার কাজ। বগুড়া এমনিতেই ব্যস্ত শহর। এরমধ্যে আমরা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে সাধারণ মানুষদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। এজন্য সবকিছু উপেক্ষা করে কাজ করতে হচ্ছে।

শহরের ইয়াকুবিয়ার মোড়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক পুলিশের কন্সটেবল ৫০ বছর বয়সী রাকিবুল হাসান। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, অতিরিক্ত গরমের জন্য সরকার থেকে আমাদের ছাতা দেওয়া আছে। প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করি। কষ্টতো হয়। এরপরও শান্তির জায়গা হলো মানুষকে সেবা দিতে পারা।

বগুড়া জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ট্রাফিক বিভাগে ৫৬ জন কন্সটেবল ও ২০ জন কর্মকর্তা কর্মরত আছেন। তারা প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা ও দুপুর ২টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত দুই শিফটে আট ঘণ্টা করে দায়িত্ব পালন করেন। এরমধ্যে শহরের অন্তত ১৫টি পয়েন্টে দিনের বেলাতে ২৮ জন কন্সটেবল ও ৯ জন কর্মকর্তা সড়কে যানযট নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন।

জেলা পুলিশ সূত্র আরও জানায়, তীব্র তাপপ্রহের কারণে ইতিমধ্যে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ছাতা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তাদের জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে খাবার সালাইন সরবারহ করা হবে।

বগুড়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, রোববার বগুড়ায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে। বেলা ৩টার দিকে এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

বগুড়া ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) মাহবুবুল ইসলাম খান বলেন, তীব্র দাবদাহে ট্রাফিক সদস্যরা তাদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছেন। তাদের বেশি বেশি পানি পানের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। একজন সার্জেন্ট দায়িত্বরত অবস্থায় অসুস্থ হয়েছিলেন। সবমিলিয়ে সদস্যদের স্বাস্থ্যর বিষয়টি নিয়ে আমরা সতর্ক আছি।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্যদের জন্য খাবার স্যালাইন দ্রুত সরবারহের ব্যবস্থা করা হবে। তীব্র তাপমাত্রার মধ্যেও আমরা দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর।

 

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video