ঢাকা , শনিবার, ২০২৪ নভেম্বর ২৩, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
#

আদালত

সরকারি কর্মচারিদের গ্রেফতারে পূর্বানুমতি লাগবে, হাইকোর্টের রায় স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২০২২ সেপ্টেম্বর ০১, ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন
#

সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে পূর্বানুমতি নেয়ার বাতিলের রায় আগামী ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। ফলে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে পূর্বানুমতি নিতে হবে।

বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বিভাগ এ রায় ঘোষণা করেন।

এরআগে গত ২৫ আগস্ট সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নেয়ার বিধান সংক্রান্ত সরকারি চাকরি আইনের ৪১(১) ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বাতিল ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। 

এরপর এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করেন। আবেদনের শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

২০১৮ সালের নভেম্বরে সরকারি চাকরি আইন প্রণয়ন করা হয়। সরকারি কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধাসংক্রান্ত আইনের ৪১(১) ধারাটি সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের পরিপন্থি উল্লেখ করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়।

ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে সরকারি চাকরি আইনের ৪১(১) ধারাটি কেন সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। ওই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় দেন হাইকোর্ট বিভাগ।

হাইকোর্টে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী একলাস উদ্দিন ভুঁইয়া, রিপন বাড়ৈ ও সঞ্জয় মন্ডল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।

সরকারি চাকরি আইনে ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মচারীর ক্ষেত্রে ব্যবস্থাদি-সংক্রান্ত আইনের ৪১(১) ধারার ভাষ্য: ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে করা ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে তাকে গ্রেফতার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে।’

অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, সংবিধান অনুসারে সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। সরকারি চাকরি আইনের ধারাটি বৈষম্যমূলক।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ হাইকোর্টের রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেন, আদালত রায়ে সরকারি চাকরি আইন-২০১৮-এর ৪১(১) ধারা বেআইনি, সংবিধান পরিপন্থি, মৌলিক অধিকার পরিপন্থি বলে ঘোষণা করেছেন।

আদালত বলেছেন, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে আছে, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে। তারপরও ৪১(১) ধারা করে সেখানে সরকারি কর্মচারীদের আলাদাভাবে একটি সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। তা কোনোভাবেই সংবিধানসম্মত নয়, এ আইন একটি মেলাফাইড (অসৎ) উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের সুরক্ষা দিতে এ আইনের ৪১(১) ধারা সংযোজন করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ রায়ের ফলে তাদের গ্রেফতারে এখন আর পূর্বানুমতির প্রয়োজন নেই।

মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আমরা আদালতকে দেখিয়েছি; এ আইন করার পেছনে একটাই উদ্দেশ্য: সেখানে সরকারি কর্মচারীদের সাধারণ নাগরিক থেকে একটু আলাদা করে তাদের একটি বিশেষ শ্রেণি হিসেবে দেখিয়ে, তাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। অপরাধ করলেও যেন তারা অপরাধী হিসেবে শাস্তি না পায়। বিশেষ করে এ আইনের মাধ্যমে দুদকের যে স্বাধীনতা, সেটি খর্ব করা হয়েছিল।’

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video