ঢাকা , বুধবার, ২০২৪ মে ১৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
#

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত দৃষ্টিনন্দন স্পট বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২০২৪ এপ্রিল ২৫, ০৬:২৬ অপরাহ্ন
#

২৫ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার)  নতুন সাজে সজ্জিত হচ্ছে সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট  চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপকূলীয় সমুদ্র সৈকত, বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে আসা ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় প্রতিদিনই লোকে লোকারন্য হয়ে উঠেছে এই সমুদ্র সৈকত।

চট্টগ্রাম শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতটি গণ্ডামারা, সরল, বাহারচড়া ও খানখানাবাদ উপকূলের প্রায় ৩৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। সারি সারি ঝাউ বাগান ও বালুময় দীর্ঘতম চরাঞ্চল এবং দীর্ঘ বেড়িবাঁধে ঘেরা সমুদ্র সৈকতটি ভ্রমণ পিপাসুদের মন জুড়ানো পর্যটন কেন্দ্রে হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, পতেঙ্গা সী-বীচ ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ছাড়াও দেশের স্বল্প পরিচিত সমুদ্র সৈকতের মধ্যে অন্যতম ও পর্যটন স্পট হচ্ছে সমুদ্র সৈকত হচ্ছে বাঁশখালীর সমুদ্র সৈকত।

ঈদের পর থেকে প্রতিদিন শত শত লোকের পদচারণায় মুখর থাকছে এ পর্যটন স্পটটি। ভ্রমণ পিপাসুরা সারি সারি ঝাউগাছের শীতল বাতাস ও সমুদ্রের জোয়ারের ঢেউয়ের তরঙ্গের সামনে সৈকতে ঝাঁকেঝাঁকে লাল কাঁকড়ার দৌঁড়ঝাপ দৃশ্য উপভোগ করার পাশাপাশি  সূর্যাস্তের সময় আপনজনদের সাথে ছবি-সেলফি ও ভিডিও ধারণের মধ্যদিয়ে চমৎকার আনন্দ উপভোগ করতে ভিড় জমায় পর্যটকরা। এছাড়াও সেখানে গড়ে উঠছে অস্থায়ী ঝাল বিতান, চটপটি, কুলিং কর্ণার,চায়ের দোকান ও ভাতঘরসহ অস্থায়ী দোকানপার্ট, ঈদ উপলক্ষে বসানো ঘূর্ণিয়মান দোলনা।

বিগত দিনে উপজেলা প্রশাসন ও পর্যটন কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পর্যটন এলাকা হিসেবে বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়া হলেও কর্মকর্তাদের পরিদর্শন ব্যতীত কোনো কার্যক্রমই তেমন গতি পায়নি এটি। দিগন্ত বিস্তৃত সাগরের বুকে সূর্যাস্তের দৃশ্য, লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ বা ছোট -বড় সবাই দলবেঁধে ফুটবল, ক্রিকেটে মেতে ওঠা ও সমুদ্রের ঢেউয়ের তরঙ্গের দৃশ্য পর্যটকদের দেয় মহা আনন্দ।

খানখানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, বিগত সময়ের তুলনায় এবছর ঈদের দিন থেকে বাঁশখালী উপকূলের সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ঈদের ছুটির সুবাদে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে ছুটে এসেছে। পতেঙ্গা সী-বীচ এলাকাটি বেশি দূরবর্তী না হলেও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামবাসীর জন্যে অনেক দূরবর্তী এলাকায় অবস্থিত। আর চট্টগ্রাম শহর থেকে বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত কাছে হওয়ার সুবাদে খুব কম সময় ও স্বল্প খরচে এসে ভ্রমণ পিপাসুরা আনন্দ উপভোগ করতে পারছে। যার ফলে দিনদিন লোকে লোকারন্য হয়ে উঠতে চলছে বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত। তবে উপজেলা প্রশাসন ও পর্যটন কর্পোরেশন কতৃপক্ষ যদি আন্তরিক হয় তাহলে বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতটিকে আরো সুন্দর ও চমৎকার পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

সরেজমিনে পরিদর্শনকালে রাঙ্গুনিয়া থেকে আসা জেয়াছমিন আক্তার, ফয়সাল আকবর, সীতাকুণ্ড থেকে আসা স্মৃতি রাণী মজুমদার, কিষান চক্রবর্তী মজুমদার, পটিয়ার জহুরুল হক চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন পর্যটকের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবছর ঈদের পর থেকে তীব্র তাপদাহের কারণে দূরবর্তী কোনো পর্যটন স্পটে যেতে আগ্রহী নয়। আর কম খরচে ও স্বল্প সময়ের মধ্যে বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতে এসে আনন্দ উপভোগ করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এছাড়াও এই সমুদ্র সৈকতে আসার পথে বাঁশখালীর প্রবেশদ্বার চাঁদপুর বেলগাঁও চা-বাগানের সৌন্দর্য্যও পর্যটকরা উপভোগ করতে পারছে বলেও জানান তারা। এসময় পর্যটকরা আরো বলেন,স্বল্প সময়ের মধ্যে বাঁশখালী উপকূলীয় সমুদ্র সৈকতটি বেশ পরিচিতি লাভ করলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই নাজুক হওয়ার কারণে ভ্রমণ পিপাসুদের আগ্রহটা কমে যেতে পারে। তাই পর্যটকদের যাতায়াত সুবিধার্থে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে বলেও মনে করেন পর্যটকরা।

বাহারচড়া ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম ইউনুস বলেন,উপকূলীয় সমুদ্র সৈকত সবার কাছে বিনোদন এবং পর্যটন স্পটে রূপ নেওয়াতে এবার ঈদের ছুটিতে প্রচুর লোক সমাগম হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও পর্যটন কর্পোরেশনের সহযোগিতা পেলে সমুদ্র সৈকতটি পর্যটন স্পট হিসেবে পূর্ণতা পাবে।

সমুদ্র সৈকত এলাকাকে ঘিরে গড়ে উঠা বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতে বসানো হয়েছে ১০টি কিটকট ছাতাযুক্ত চেয়ার। এগুলো সম্পূর্ণ ফ্রিতে ব্যবহার করতে পারছেন পর্যটকরা। তবে বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতকে সত্যিকারার্থে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তুলতে হলে পর্যটন কর্পোরেশনকে বাস্তবমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং এতে উপজেলা প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতাও একান্ত প্রয়োজন।

এরই মধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, আনোয়ারা পারকি সী-বীচ ও বাঁশখালী বাহারচড়া -খানখানাবাদ সমুদ্র সৈকত ও সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট গুলোতে আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা ও পর্যটন শিল্প প্রসারের লক্ষ্যে ট্যুরিষ্ট পুলিশ মোতায়েনে সংক্রান্তে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মহোদয় আবেদন করেছে মর্মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকজুড়ে ভাইরাল হয়েছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন আক্তার বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয় ট্যুরিষ্ট পুলিশ মোতায়েন সংক্রান্ত আবেদন করেছেন কিনা সেটা জানিনা, যেহেতু এবিষয়ে কোনো চিঠি আমাদের কাছে আসেনি। তবে সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট বাঁশখালী উপকূলীয় সমুদ্র সৈকতটি ঈদের পর থেকে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠার বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছি।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video