অন্তঃসত্ত্বার যত্ন হেলাফেলার নয় মোটেও; আর সময়টা যদি হয় ভরা গরমের মৌসুম, তার অস্বস্তি বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তাই গরমের দিনে চাই একটু বিশেষ পরিচর্যা।
নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গরমের দিনে গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্য জটিলতার বিষয়গুলো জানিয়ে সতেজ ও সুস্থ থাকার উপায় বাতলে দিয়েছেন ফোরটিস হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জয়শ্রী নাগারাজ ভাসগি।
বমি বমি ভাব-
গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে ৬০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ নারীর বমি হয় বা বমি বমি ভাব হয়। অতিরিক্ত বমি হলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে, তাতে দুর্বলতা বাড়তে পারে। সমস্যা বেশি হলে হাসপাতালেও যেতে হতে পারে কাউকে কাউকে।
বদহজম, খাবারে অরুচি-
গর্ভকালে খাদ্যনালী, পাকস্থলী ও অন্ত্র দিয়ে খাবার নামার গতি ধীর হয়ে যায়। এ সময় অন্ত্র ও স্ফিংটার পেশি তেমন সংকুচিত থাকে না বলে খাবার উগড়ে আসার অনুভূতি হতে পারে। সঙ্গে থাকতে পারে বুক জ্বালাপোড়া।
অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেট যত স্ফিত হতে থাকে, ততই বাড়তে থাকে এসব সমস্যা।
পায়ে পানি-
পায়ের পাতা ও হাঁটু থেকে নিচের অংশ পানি জমে ফুলে যেতে পারে। সাধারণত গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস কেটে যাওয়ার পর এ সমস্যা দেখা দেয়।
গোড়ালি, পা, আঙুল এবং মুখ অতিরিক্ত ফুলে যাওয়া অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ হতে পারে; তাই সতর্ক থাকতে হবে।
যদি বিশ্রাম নিয়েও হাত-পা ফোলা না কমে, কিংবা বাড়তে থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
শ্বাস-প্রশ্বাসের ওঠানামা-
গর্ভকালে জরায়ু স্ফীত হতে থাকলে ফুসফুসের ওপর চাপ বেড়ে যায়। তাতে শ্বাস-প্রশ্বাসে অস্বস্তি হতে পারে। গরমের দিনে এই হাঁসফাঁস দশা আরো বেড়ে যায়; বিশেষ করে শুয়ে থাকা অবস্থায়।
অতিরিক্ত গরম বোধ-
অনেক গর্ভবতী নারী এ দিনগুলোতে গরম বোধ করেন এবং ঘামতে থাকেন বেশিরভাগ সময়।
আসলে গর্ভকালে নারীর শরীরে এক থেকে দেড় লিটার বেশি রক্ত প্রবাহিত হয়। এ কারণেই শরীরে উত্তাপ বোধ করেন তিনি ।
এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ হচ্ছে, শরীরে আর্দ্রতা ধরে রাখতে হবে। সেজন্য প্রচুর পানি পান করতে হবে। সেই সঙ্গে ফলের রস ও তাজা সবজি খেতে হবে।
কিছু কিছু অতিরিক্ত মিষ্টি পানীয় পানের পরপরই ভীষণ তেষ্টা অনুভূত হয়; গর্ভাবস্থায় এসব এড়িয়ে চলাই ভালো।
শরীর শীতল রাখতে গোসল-
গ্রীষ্মের গরমে শরীরকে স্বস্তিতে রাখবে গোসল। সন্ধ্যার দিকে অথবা ঘুমানোর আগে আগে গোসল শরীরকে সতেজ রাখবে কয়েক ঘণ্টার জন্য।
যদি এ সময় গোসলের অভ্যেস না থাকে, তাহলে হালকা গা ভেজানো যেতে পারে। শুরুর দিকে তালু, পা এবং হাত ভেজানো যেতে পারে। তারপর পেটের উপর বৃত্তাকারে আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
আরামদায়ক জামা-
গর্ভকালে আঁটসাঁট পোশাক পরা একদমই ঠিক হবে না। জামা পরে যেন আরামে নড়াচড়া করা যায়, শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া যায় সহজে।
ঘাম টেনে নেয় এবং নিজেকে ফুরফুরে লাগে এমন কাপড়ের পোশাক বেছে নিতে হবে।
হালকা শরীরচর্চা-
যদি চিকিৎসক নিষেধ না করেন থাকেন, তাহলে শরীরচর্চা চালিয়ে যেতে হবে গর্ভকালেও। পেশি ও পেশিবন্ধ যত নমনীয় থাকবে, গর্ভকালে শরীরের বাড়তি ওজন সামলানো ততো সহজ হবে।
রক্ত সঞ্চালন বাড়ে- এমন ব্যায়াম করতে হবে নিয়মিত। চিকিৎসকরা এসময় হাঁটা ও সাঁতার বেশ কার্যকর বলে মনে করেন।
হালকা খাবার, তবে ঘন ঘন-
গর্ভকালে দেরি করে খাওয়া চলবে না একেবারেই। তবে ভারী খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। সকালের নাস্তা ঠিকমত হতে হবে; সেটা হতে হবে পুষ্টিকর।
খাওয়ার পরের তিন ঘণ্টায় এটাসেটা খাওয়া ঠিক হবে না। দিনে অন্তত পাঁচবার খেতে হবে। এরমধ্যে এক থেকে দুইবারের খাবারে ফল ও সবজি থাকতে হবে। সেই সঙ্গে খেতে হবে হালকা প্রোটিন।
বিশ্রাম এবং বিশ্রাম-
দিনে অন্তত দুইবার অল্প সময়ের জন্য ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। ছায়া রয়েছে এবং খোলা জানালা রয়েছে এমন ঘরই ঘুমানোর জন্য সেরা। পানিতে ভেসে থাকাটাও খুব আরামদায়ক এ সময়।
মানসিক চাপ তৈরি করে এমন যে কোনো কিছুই এসময় এড়িয়ে চলাই উত্তম।
গর্ভবতী নারীকে অবশ্যই নিয়মিত তার চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। শরীর ও মনের যে কোনো অস্বাভাবিক উপসর্গ নিয়েই চিকিৎসকের সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করতে হবে।