দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার ইসলামপাড়া মহল্লার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ১৪ বছরের নাবালক আশিকুর ইসলাম নির্মমভাবে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। তার মা আরিশা আফরোজ অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের গুলিতে তার ছেলে প্রাণ হারিয়েছে। ছেলে হত্যার বিচারের জন্য তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
আরিশা আফরোজ জানান, তার ছেলে আশিকুর বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় বনশ্রী এলাকায় আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয় আশিকুর। স্থানীয়রা তাকে দ্রুত বনশ্রী অ্যাডভান্স হাসপাতালে নিয়ে গেলেও সেখানে পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয়।
শহিদ আশিকুরের মা বলেন, তিনি এক বছর বয়সী সন্তানকে নিয়ে স্বামীর সংসার ত্যাগ করেছিলেন এবং ঢাকায় দর্জির কাজ করে তাকে বড় করেছিলেন। ছেলের ভবিষ্যতের জন্য সবকিছু ত্যাগ করা এই মায়ের জীবনে এখন শুধুই শূন্যতা।
তিনি আরও জানান, ঘটনার দিন দুপুরে তিনি আশিকুর এবং তার স্বামীকে নিয়ে একটি বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলেন। দাওয়াত শেষে দোকানে ফিরে গেলে আশিকুর বাসায় যাওয়ার কথা বলে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পর খবর আসে, আশিকুর গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
আশিকুরের পিতা ফরিদুল ইসলাম, যিনি রিকশা চালক, বলেন, তার ছেলে মায়ের সঙ্গে থাকলেও মাঝেমধ্যে তাকে দেখতে আসত। পুত্রের অকালমৃত্যুতে তিনি শোকাহত এবং বিচার দাবি করেন।
মায়ের পক্ষ থেকে ২৭ জুলাই খিলগাঁও থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। পরে ২৮ আগস্ট ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। বিচারকের নির্দেশে মামলা খিলগাঁও থানায় রেকর্ড হয় এবং এরই মধ্যে কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী, আন্দোলনে মোট ১০ জন শহিদ হয়েছেন, যাদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
আশিকুরের মা আরিশা আফরোজ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তার পুত্র হত্যার ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।