চট্টগ্রামের বাঁশখালী-আনোয়ারা সীমান্তবর্তী শঙ্খ নদীর উপর ৩২ কোটি ব্যয়ে নির্মিত তৈলারদ্বীপ সেতু স্থায়ী ভাবে টোলমুক্ত রাখার দাবিতে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে ছাত্র-জনতা, সামাজিক, রাজনৈতিক, মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বাঁশখালী ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার সর্বসাধারণ।
দেশব্যাপী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র- জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী স্বৈরাসরকারের পতনের খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই তৈলারদ্বীপ সেতু টোলমুক্ত ঘোষণা করছে ছাত্র-জনতারা। এরপর থেকেই বন্ধ রয়েছে টোল উত্তোলন কার্যক্রম। এসেতুতে টোল প্রথা পুনরাবৃত্তি ঘটলে ছাত্র-জনতার রক্তার্জিত বিপ্লবী বিজয় বিঘ্নিত হবে শুধু তা নয় বরং চরম বৈষম্যের শিকার হতে পারে সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে সেতুটি স্থায়ীভাবে টোলমুক্ত রাখার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন সামাজিক, মানবিক, রাজনৈতিক, শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে শত শত মানুষ প্রতিনিয়ত সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসুচি পালন করে যাচ্ছে।
এছাড়াও বাঁশখালীবাসী ও ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে উপদেষ্টা, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, উপদেষ্টা, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, প্রধান প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, সহকারী প্রকৌশলী (সওজ) অর্থ বিভাগ, বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম, জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম, নির্বাহী প্রকৌশলী, সওজ চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক বিভাগ, চট্টগ্রাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বাঁশখালী- আনোয়ারা, অফিসার ইনচার্জ বাঁশখালী -আনোয়ারাসহ বিভিন্ন দপ্তর ও প্রশাসন বরাবর অনুলিপিও প্রদান করা হয়।
৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারা -বাঁশখালী সীমান্তবর্তী শঙ্খ নদীর উপর নির্মিত তৈলারদ্বীপ সেতু নির্মাণ পরবর্তী ২০০৭ সাল থেকে শুরু হয় টোল উত্তোলন। তিন বছরে নির্মাণ খরচ উঠলেও প্রতি তিন বছর পরপর ইজারা তথা টেন্ডার প্রক্রিয়ানীতি অবলম্বন করে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বহাল তবিয়তে চালিয়ে আসছিল টোল উত্তোলন কার্যক্রম।
ইজারা তথা টেন্ডারনীতি অবলম্বন করে টোল উত্তোলন কার্যক্রম চালিয়ে আসলেও নির্মাণ পরবর্তী সময় থেকে এই সেতুর দৃশ্যমান কোন মেরামত কাজ করতে দেখা যায়নি। আইন কানুনের কোন ধরনের তোয়াক্কা করতোনা টেন্ডার পাওয়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন, সরকার নির্ধারিত নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই ইচ্ছে মতো আদায় করতো টোল। তৈলারদ্বীপ সেতুর ওপর নির্মিত দোহাজারী সেতু, চন্দনাইশ সেতু, ডলুখাল সেতু, খোদারহাট সেতুসহ অপরাপর সেতু গুলো টোলমুক্ত থাকলেও ক্ষমতার দাপটে ইজারা তথা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় টোল নীতি চলমান রাখা হয় তৈলারদ্বীপ সেতুর।
সর্বশেষ প্রায় ৩৩ কোটি টাকায় ৩বছরের ইজারা পান জে.কে. ট্রেডিং নামে এক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
ইজারা চুক্তির কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কাই করতনা ইজারা পাওয়া ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। কতৃপক্ষের নির্ধারিত তালিকা বহির্ভূত ইচ্ছে মতো টোল আদায় করে আসছিল মর্মেও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
শঙ্খ নদীর ওপর তৈলারদ্বীপ সেতু ছাড়াও দোহাজারি সেতু , চন্দনাইশ সেতু, সাতকানিয়া ডলু সেতু ও খোদার হাট সেতুসহ ৬টি সেতু নির্মিত হয়েছে। যে গুলো তৈলারদ্বীপ সেতুর তুলনায় অনেক বড়। ওইসব সেতু টোলমুক্ত থাকলেও একমাত্র তৈলারদ্বীপ সেতুতেই দীর্ঘ ১৭ বছর যাবত টোল আদায় করা হয়। যাহা সম্পূর্ণ জনস্বার্থ পরিপন্থী নীতিও বটে।
স্বাভাবিক নিয়মেই এ সেতুতে কোনো টোল আরোপের সুযোগ না থাকা সত্বেও টোল নীতি চলমান রাখার ফলে এসেতুটি টোলমুক্ত করণের আবেদনে জনসাধারণের পক্ষে দায়ের করা রিট মামলা পরিচালনা করেন সাবেক এটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ। ওই রিট মামলাটি বিচারপতি নাঈমা হায়দার এবং এটিএম সাইদুর রহমানের বেঞ্চ ২০১৭-১৮ সালের জন্য সেতুটির ইজারা প্রদান তথা টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ সব কার্যক্রম স্থগিত রাখার আদেশ দেন। একই সাথে ওইবছরের ২০ ফেব্রুয়ারী প্রচারিত এআদেশে সংশ্লিষ্টদের এব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হলেও কোন ধরনের আইনের তোয়াক্কা না করে আওয়ামী সরকার আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এই সেতুতে জনস্বার্থ পরিপন্থী টোল উত্তোলন কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। আইনের তোয়াক্কা না করে জনস্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম পরিচালনা করায় বাঁশখালী, আনোয়ারা, পেকুয়া, চকরিয়াসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার সর্বপেশার মানুষকে অতিষ্ঠ করছে।
এরই মধ্যে বাঁশখালীবাসী ও ছাত্রসমাজের পক্ষে বেশ কয়েকটি অনুলিপি দাতা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সিনিয়র সদস্য মোঃ নিজাম উদ্দিন বলেন, বাঁশখালী ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার সর্বসাধারণের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি তৈলারদ্বীপ সেতুর টোলমুক্ত করা। কিন্তু আওয়ামী স্বৈরাচার সরকারের আমলে তাদের দলীয় নেতাকর্মীরা একচেটিয়া প্রভাব খাটিয়ে এসেতুতে টোল বাণিজ্য করে আসছিল।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র -জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পদত্যাগের পর এই সেতু টোলমুক্ত ঘোষণা করছে শত শত ছাত্র-জনতা। এরপর থেকে এসেতুটি স্থায়ী ভাবে টোলমুক্ত রাখার দাবিতে বিভিন্ন ছাত্রসমাজ, সামাজিক ও রাজনৈতিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাঁশখালীবাসী ও ছাত্রসমাজের পক্ষে থেকে এই সংক্রান্তে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও প্রশাসনে লিখিত অনুলিপি প্রদান করা হয়। তৈলারদ্বীপ সেতু স্থায়ীভাবে টোলমুক্ত রাখার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মণ্ডলী ও প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছে করেছে সর্বসাধারণ।