ঢাকা , শুক্রবার, ২০২৪ মে ১৭, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
#

জাতীয়

আজ মহান স্বাধীনতা দিবস

মো. হুমায়ুন কবির
প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২০২৪ মার্চ ২৬, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন
#

আজ ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনটিতেই শুরু হয়েছিল বাঙালির সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের। ডাক এসেছিল হানাদাররে কবল থেকে মাতৃভূমিকে মুক্ত করার। ওই ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি শোষকের হাত থেকে প্রিয় মাতৃভুমিকে মুক্ত করতে রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা। দীর্ঘ নয়মাসের  সেই রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিণতিতে বিশ্বের বুকে জন্ম নিয়েছিল একটি নতুন রাষ্ট্র, আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ, ও একটি লাল সবুজের পতাকা।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. শাহবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা পৃথক বাণীতে তারা দেশবাসীকে স্বাধীনতার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

একাত্তরের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বলেন, 'এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।'  বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বীর বাঙালি মাতৃভূমিকে হানাদারমুক্ত করতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।  প্রশিক্ষণহীন নিরস্ত্র বাঙালিরা যেভাবে একটি সুশৃঙ্খল অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিল, পৃথিবীর ইতিহাসে তেমন সংগ্রামের দৃষ্টান্ত বিরল। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের ত্যাগ, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম এর বিনিময়ে  ৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় বিজয়। বাঙালি লাভ করে বহু প্রতিক্ষিত স্বাধীনতা। পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান পায় স্বাধীন বাংলাদেশের।

প্রতিবছরের মতো সমগ্র জাতি আজ শোক ও গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগকারী শহীদরে। গোটা দেশ জুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপিত হবে। বাঙালি জাতির জীবনে স্বাধীনতা দিবস একই সঙ্গে আনন্দ ও বেদনার দিন।

আজ সরকারি ছুটি দিন। ভোরে রাজধানীতে ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। সূর্যোদয়ের ক্ষণ ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাদল্য অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন অমর শহীদদের প্রতি। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বসাধারণের শ্রদ্ধায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ।

দিনটিতে সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ছাড়াও সব সড়ক ও সড়কদ্বীপ সাজানো হয়েছে জাতীয় পতাকা ও রঙিন পতাকায়। গুরুত্বপুর্ন ভবনগুলোতে থাকছে আলোকসজ্জা।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরুর পর  ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবর রহমান পাক বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের আগ মুহূর্তে স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে শত্রুসেনারে বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করতে শেবাসীকে নির্শে নে। তৎকালীন ইপিআরের ওয়্যারলেস থেকে সে বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় দেশের সর্বত্র। বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণায় সেদিনই ঐক্যবদ্ধ সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোটা জাতি। চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকেও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ প্রচার করা হয়। প্রথমে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হান্নান বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা পাঠ করেন। ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপঅধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেন। তাই এই ঘোষণা দেশের জনগণের সঙ্গে সেনাবাহিনীর একাত্মতার বার্তা হিসেবে দেশবাসীকে উজ্জীবিত করে।

এরপর ১৭ এপ্রিল শপথ নেয় নবগঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাশে সরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত এই সরকারের নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক কাঠামো লাভ করে। তারে নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে আত্মপ্রকাশ করে।

স্বাধীনতার পর বাংলাশেকে তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ আখ্যা দেয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসে দারিদ্র্য আর দুর্যোগের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পক্ষে র্অনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থ-সামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এ প্রাপ্তি নিয়েই এবারও জাতি স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবে।

প্রতি বছরের মতো এবারও স্বাধীনতা দিবসটি সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে জাকজমকপূর্ণভাবে পালিত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করছে। বিটিভি, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের কর্মসূচি নিয়েছে। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করছে বিশেষ ক্রোড়পত্র।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ডাকছে শিশু-কিশোর সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সারাদেশের স্মৃতিসৌধগুলোতে পুস্পস্তবক অর্পণের পাশাপাশি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কুচকাওয়াজ, মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা সভা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দল ও সংগঠন এসব কর্মসূচি পালন করছে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video