গতবার যখন পদুয়ায় যাচ্ছিলাম, আমার গাড়ি বহরের সামনে মামুন ভাই ছিলেন। তখন মাথায় এই চিন্তা আসেনি যে এই দেখাই শেষ দেখা হবে। এখন আমি তাদের কীভাবে চেহারা দেখাব, আপনারাই বলুন। তার ছোট ছোট দুটি মেয়ে, তাদের বাবা নেই। আমারও বাবা নেই। তাদের অবস্থা ও আমার অবস্থা একই—বাবা নেই। আমি অপেক্ষা করছি, আমার বাবা হত্যার বিচার হবে। তবে তাদের কাছে ওয়াদা করেছি, আমার বাবা হত্যার বিচারের আগে তাদের বাবার হত্যার বিচার হবে।
একই সঙ্গে তিনি নিহত মামুনের পরিবারকে সান্ত্বনা দেন এবং তাদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নে সম্প্রতি সালিশ বৈঠকে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত সৌদি আরব রিয়াদ শাখা বিএনপির সহ-সভাপতি সেকান্দর মামুনের কবর জিয়ারত শেষে পরিবারের সঙ্গে দেখা করে এসব কথা বলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুমাম কাদের চৌধুরী।
এ সময় উৎসুক নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, "বালুর ব্যবসার কারণে প্রতিদিন কোনো না কোনো পরিবারের উপর হামলা হচ্ছে। থানায় কোর্টে শত শত মামলা হচ্ছে। বর্তমান সরকার বারবার বলে এসেছে বালু ব্যবসা অবৈধ। যারা বৈধ ব্যবসা করছে, তাদের করতে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, সন্ত্রাসীরা যারা বালু ব্যবসার দখল নিয়ে চাঁদাবাজি করে কোটি কোটি টাকা কামানোর চেষ্টা করছে, তাদের কারণে রাঙ্গুনিয়াতে আর বালু ব্যবসা করা সম্ভব না। হয়তো আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করে কিছু শর্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে।"
তিনি আরও বলেন, "আপনারা জানেন, অনেক গ্রাম আছে যেখানে অবৈধ বালু ব্যবসার কারণে নদী ভেঙে যাচ্ছে, ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। তবে লোভের কারণে যারা রাজনীতিতে জড়িত, তারা এ বালু ব্যবসা বন্ধ করছে না। এর পেছনে কোটি টাকার ব্যবসা আছে। এখন আপনারা সিদ্ধান্ত নিন—গ্রাম বাঁচানো বেশি জরুরি, নাকি টাকা কামানো বেশি জরুরি। আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমাকে গ্রাম বাঁচাতে হবে। তাই হয়তো সামনের বছরে বালু ব্যবসা পুরোপুরি অবৈধ হয়ে যেতে পারে।"
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন উপজেলা বিএনপির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, চট্টগ্রাম উত্তরজেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইউসুফ চৌধুরী, পৌরসভা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হেরাল উদ্দিন শাহ, সরফভাটা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম, পদুয়া বিএনপির সভাপতি নুরুল ইসলাম মেম্বার, সরফভাটা ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মো. আবছার মেম্বার, সৈয়দ নুর, চট্টগ্রাম উত্তরজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ভিপি আনছুর উদ্দিন, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাকসুদুল হক চৌধুরী, যুগ্ম আহ্বায়ক পারভেজ মোশাররফ, দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানা যুবদল নেতা মো. দিদারুল আলম, উত্তর জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মো. ফারুকুল ইসলাম, পৌরসভা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াকুব রানা, সাহেদুল ইসলাম ইফাক, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সদস্য সচিব হেলাল আহমেদ, পৌর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তাহানিয়াজ মোরশেদ তোহা, যুবদল নেতা মো. লোকমান, মনছুর, ইয়াছিন, ইয়াকুব, আনোয়ার, সাদ্দাম, দেলোয়ার প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ নভেম্বর (শনিবার) সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে সরফভাটায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এই ঘটনার সমাধান করতে ১ ডিসেম্বর (রবিবার) রাত ৭টার দিকে সরফভাটা ইউনিয়নের ইত্যাদি চত্বর এলাকায় দুই পক্ষ সালিশ বৈঠকে বসে। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও পরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মামুন নিহত হন। নিহত মামুন কেবল মৃত্যুর এক মাস আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ছুটিতে এসেছিলেন।