আমাদের লেভেল দুর্নীতির কথা শোনেননি, শুনবেনও না: নৌপরিবহন উপদেষ্টা বন্দরের এনসিটি জেটিতে একটি জাহাজ পরিদর্শন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা।
চট্টগ্রাম: বড় ধরনের দুর্নীতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ছোটগুলো আপনা-আপনি নিয়ন্ত্রণে আসবে। আশাকরি, আমাদের লেবেলে দুর্নীতির কথা শুনেননি, ইনশাআল্লাহ শুনবেনও না।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন শেষে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) চত্বরে নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
দুর্নীতি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি দেখতে, বুঝতে, শিখতে এলাম।
আমি বন্দর বিশেষজ্ঞ নই। মন্ত্রণালয়ে যারা আছেন তাদের ইনভলব করা হবে। ২২ বছরের ঘটনা ২২ মিনিটে দূর করা সম্ভব না। ধৈর্য ধরেন। আমরা ধীরগতিতে ধাপে ধাপে এগোচ্ছি। বন্দরের দুর্নীতির বিষয়ে খুব সচেতন আছি। এমন না যে, নতুন শুনছি। এ কারণে বন্দরে আসা। দেশে স্থলবন্দর অনেক আছে। সেখানে আরও বেশি দুর্নীতি হচ্ছে। ২২ বছর থেকে যেভাবে হয়েছে একটা দায়িত্বও বটে। মাত্র দুই মাসের মধ্যে যদি মনে করেন ২২ বছরের সমস্যা দূর হবে, ঠিক না। ২২ বছর ধৈর্য ধরেছেন, ২২ মাস ধৈর্য ধরে দেখেন। পরিবর্তন হয় কিনা। অনেক অনিয়ম হয়েছে। অনেক লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। যেগুলো ফাংশান করছে না। সব আমাদের নজরে আছে। এ বন্দরকে জঞ্জালমুক্ত করতে হবে।
বন্দরে বহু বছর থেকে বিনা রেজিস্ট্রেশনে গাড়ি চলছে। আজ ম্যাজিস্ট্রেট আসবে। অভিযান চালাবে। সব টেন্ডার ওপেন হবে। ওপেন টেন্ডারের সব শর্ত রিভিউ করবো। সরকার টু সরকার চুক্তি হবে ডিপিএমে। নেগোশিয়েশন টিম বসিয়ে দিয়েছি। কতগুলো কাজ আছে জি টু জি করতে হবে। মোংলা বন্দরে নতুন জেটি তৈরি হচ্ছে। দুইটি দেশ আগেই কাজ পেয়েছে।
তিনি বলেন, জেনারেল কার্গো বার্থ কাউকে দেব না। যেটা দেশের জন্য ভালো সেটি করবো। ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্টের জন্য সব দেশ বসে আছে। এর অনেক সুবিধা আছে। যেসব দেশের কথা আমরা বলছি সেসব দেশে আমাদের স্বার্থ আছে। আমাদের স্বার্থ আমরা বেশি করে দেখব। আমার কাছ থেকে দেশের জন্য ক্ষতিকর, আমার লোকের চাকরি যাবে এমন কিছু পাবেন না।
সরকারের মাত্র দুই মাস হয়েছে। আমি আরও আগে আসতে চেয়েছিলাম। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম। এটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের লাইফলাইন। এ বন্দর যদি ঠিকভাবে না চলে, বন্দর যদি সক্ষম না হয়, এ বন্দরে যে ধরেনর একটা অব্যবস্থা ছিল তা যদি আস্তে আস্তে দূর না হয় তাহলে আমাদের ইকোনমিক লাইফলাইনে অসুবিধা হবে। বন্দরের কর্মকর্তাদের ৫ ঘণ্টা ব্রিফিং নিয়েছি। এ বন্দরের যে ব্যবস্থা দেখেছি, একজন ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলেছি। অটোমেশন করতে পারলে লোডিং টাইম কমে যাবে। ৬ দিনের মধ্যে জাহাজ ফ্রি হয়ে যাবে।
জোয়ার না হওয়া পর্যন্ত বন্দর থেকে জাহাজ বের হতে পারে না। দিনে দুইবার জোয়ার ভাটা হয়। এ বন্দরে ২০ বছর আগের কনটেইনার পড়ে আছে। ১২-১৪ বছরের গাড়ি পড়ে আছে। এগুলো নিলামের কাজ এনবিআরের। এ বন্দরের কার্যকারিতা কীভাবে বাড়বে। আমি নোট করিয়েছি। এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলবো। প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করতে হবে।
আমার মনে হলো, শুধু বন্দর কর্তৃপক্ষ নয়, আরও অনেক এজেন্সি আছে তাদের কাজ করতে হবে। অটোমেশনের পরিকল্পনা করেছি। আমাদের বিনিয়োগকারী আছে। বে টার্মিনাল নিয়ে এ মুহূর্তে কিছু বলবো না। আপাতত সমস্যা নেই। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে ডিটেইল প্রেজেন্টেশন দিতে বলেছি। আমাদের আমদানি রপ্তানি বাড়ছে। ফরেন ইনভেস্টমেন্ট আসবে। পিসিটিতে কনটেইনার প্রতি ১৮ ডলার দিচ্ছে। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে আমাদের লোকজনই কাজ করছে।
বিদেশি অপারেটর দিয়ে এনসিটি, সিসিটি পরিচালনা প্রসঙ্গে বলেন, বন্দরের জেটিগুলো সংস্কার করতে হবে। ১৯৬২ সালের আগের জেটি। এটি ভাঙতে হবে, নতুন জেটি বানাতে হবে। বিদেশি অপারেটরের বিষয়ে একটি কমিটি হবে। যদি বন্দরের প্রফিট বেশি হয়, টার্ম অ্যান্ড কন্ডিশনে যদি হয়, যারা কাজ করছে তাদের যদি অসুবিধা না হয় তাহলে হবে। স্বচ্ছতার মধ্যে হবে। রাতারাতি কিছু হবে না। সব কিছু পাবলিকলি হবে। গত সরকার যা করতে চেয়েছে তা আমরা করবো বলিনি। বেআইনি কাজ বহু হচ্ছে এখানে। আমি কারও নাম বলছি না।