প্রণোদনার বাইরে বেসরকারি চিকিৎসকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : বুধবার, ২০২০ জুলাই ২২, ০৫:১৬ অপরাহ্ন
করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা সরকারি চিকিৎসকদের প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। তবে এই প্রণোদনার বাইরে রয়ে গেছেন বেসরকারি হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টারের সঙ্গে সম্পৃক্ত চিকিৎসকরা। খবর-বাংলানিউজ
ফলে অনেকে আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণ করলেও কোনও সহায়তা মিলছে না।
চিকিৎসকদের সংগঠনগুলো দাবির বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করা হলেও এ নিয়ে কোনও নির্দেশনা নেই। হাসপাতাল চালাতে গিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানকে নির্ভর করতে হচ্ছে ব্যাংক ঋণের ওপর। অনিশ্চয়তার মুখে হাসপাতাল চালানো নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে মালিকদের।
ঢাকার পরে সংক্রমণের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। অধিক রোগীর চাপ সামলাতে সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালেও করোনা চিকিৎসা শুরু হয়। সেই সঙ্গে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠে আইসোলেশন সেন্টার। প্রণোদনার আওতায় আনা হলে চিকিৎসকদের মনোবল ও কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চিকিৎসকরা।
বেসরকারি একটি মেডিক্যাল কলেজের হৃদরোগের বিভাগের চিকিৎসক হোসেন আহম্মদ শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত করোনা রোগীর চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে তিনি নগরের পতেঙ্গায় একটি বিদ্যালয়ে অস্থায়ীভাবে গড়ে তুলেছেন ফিল্ড হাসপাতাল।
ডা. হোসেন আহম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। ফলে চিকিৎসকদের আর্থিক অনটনের মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে। ঈদের বোনাস পাবেন কিনা সন্দেহ রয়েছে। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের পাশাপাশি বেসরকারি চিকিৎসকদের প্রণোদনার আওতায় আনার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।
মা ও শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক মাহমুদা সুলতানা আফরোজা বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও সমানতালে করোনা রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছেন চিকিৎসকরা।
তিনি বলেন, দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা দিচ্ছি। ঝুঁকির মধ্যেও রোগীর সেবা প্রাপ্তির বিষয়ে সর্বোচ্চ নজর রাখছি। এতে অনেক চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে মারা গেছেন। অনিশ্চয়তার মধ্যে কাজ করছেন চিকিৎসকরা। তাদের মনোবল অটুট রাখতে প্রণোদনার আওতায় আনা হলে কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে।
বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী খান বলেন, করোনার কারণে অন্য রোগী কমে যাওয়ায় হাসপাতালের আয়ও কমে গেছে। কিন্তু করোনা রোগীর সেবা সচল রাখতে গিয়ে চিকিৎসকদের বেতনসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হচ্ছে। এসব খরচ সামলাতে গিয়ে ব্যাংকের ঋণ নিয়ে চলতে হচ্ছে। মানবিক দিক বিবেচনায় সরকারের কাছে আবেদন করেছি, বেসরকারি চিকিৎসকদের প্রণোদনা কিংবা সহায়তা দেওয়া হোক।
তিনি আরও বলেন, বাড়তি ঋণে জর্জরিত হয়ে হাসপাতাল চালাতে হচ্ছে। একপ্রকার বাধ্য হয়েই সব ক্ষেত্রে সমন্বয় করতে গিয়ে অন্য সময়ের চেয়ে এখন রোগীদের কাছ থেকে বাড়তি ফি নিতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি মো. মুজিবুল হক খান বলেন, সরকারি-বেসরকারিভাবে কতজন চিকিৎসক করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় নিয়োজিত তার তথ্য এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই। আমরা প্রথম থেকেই সরকারি চিকিৎসকদের পাশাপাশি বেসরকারি চিকিৎসকদেরও প্রণোদনার আওতায় আনার দাবি জানিয়ে আসছি। বিএমএ নেতারা এ বিষয়ে সবসময় সোচ্চার। এরপরও সরকারের তরফ থেকে কোনও নির্দেশনা পাইনি।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, বিভিন্ন সময়ে তারা সভা-সেমিনারে দাবি জানালেও লিখিতভাবে কোনও দাবি জানাননি। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকেও বেসরকারি চিকিৎসকদের বিষয়ে আলাদা নির্দেশনা নেই।