ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে রাউজানে সাবেক ওসি কেফায়েতের ‘লুটপাট’
নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২০২০ আগস্ট ২৫, ০৩:৩৯ অপরাহ্ন
রাত তখন একটা। একদল পুলিশ হঠাৎ বাড়িটা ঘিরে ফেলে। নেতৃত্বে স্বয়ং রাউজান থানার ওসি কেফায়েত উল্লাহ। পুলিশ পরিচয় দেওয়ার পর গৃহকর্তা ঘরের দরজা খুলে দিতেই এসআই সাইমন তার মাথায় পিস্তল ধরেন। ওসির নির্দেশে অন্য কনস্টেবলরা ঘর তছনছ করা শুরু করে। মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য রেখেছিলেন দুই লাখ টাকা। সেটা তো তারা নিলোই, সঙ্গে রুট করলো অলঙ্কারও। এর পরদিন গৃহকর্তাকে আসামি বানিয়ে দেওয়া হল একটি হত্যামামলায়। ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দিয়ে আদায় করা হয় আরও ৫০ হাজার টাকা। চট্টগ্রাম প্রতিদিন
রাউজান থানার সদ্য সাবেক ওসি কেফায়েত উল্লাহ ও এসআই সাইমনসহ অভিযানে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালতে মামলা দায়ের করার পর এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দিলেন মামলার বাদি কাঞ্চন চৌধুরী।
তিন কন্যা সন্তানের জনক কাঞ্চন চৌধুরী রাউজান উপজেলার গহিরা ইউনিয়নের কুণ্ডেশ্বরী এলাকার মৃত হরিপদ চৌধুরীর ছেলে। সোমবার (২৩ জুলাই) তিনি চট্টগ্রাম আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর ঘটনার দিন রাত ১১টায় কাঞ্চন চৌধুরী চট্টগ্রাম শহর থেকে বাড়িতে ফিরেছিলেন। এর ঘন্টাদুয়েক পর ওসি কেফায়েত উল্লাহর নেতৃত্বে পুলিশ তার ঘরে প্রবেশ করে। কাঞ্চন চৌধুরীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে রাখেন এসআই সাইমন। এ সময় ওসির নির্দেশে অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা তার বাসার আলমিরা, খাট ওলটপালট করে সব তছনছ করে। মেয়ের বিয়ের জন্য আলমিরায় রাখা নগদ দুই লাখ টাকা, এক ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন, আট আনা ওজনের দুটি কানের দুল ও চার আনা ওজনের একটি আংটি নিয়ে যায়।
কাঞ্চন চৌধুরীকে থানায় নিয়ে ইয়াবা ও অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার কথা বলার পাশাপাশি ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দিয়ে পরিবার থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা আদায় করে। পরে রাউজানের পাহাড়তলী এলাকায় সংঘটিত একটি ডাবল-মার্ডারের মামলায় আসামি করে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। তার একবছর পর ওই ডাবল মার্ডারের চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন থেকে কাঞ্চনের নাম বাদ যায়।
সম্প্রতি ওসি কেফায়েতকে রাউজান থানা থেকে বদলি করা হলে ভুক্তভোগী কাঞ্চন চৌধুরী আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় কাঞ্চন চৌধুরীর আরো দুই প্রতিবেশী উত্তম চৌধুরী ও দিলীপ ঘোষকে আসামি করা হয়। যারা ওসি কেফায়েতের হয়ে এলাকায় বিভিন্নজনকে হয়রানি করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে ওসি কেফায়েত উল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। কেফায়েত উল্লাহকে পুলিশ সদর দপ্তরের এক আদেশে সম্প্রতি বদলি করা হয়। ১২ আগস্ট তিনি নতুন ওসি হারুনুর রশিদকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। ২০১৯ সালে পুলিশের পিপিএম পদক পান ওসি কেফায়েত উল্লাহ।