২০২৪ সালের ৭ জুলাই দেশের শিক্ষার্থীরা নতুন এক কর্মসূচি হিসেবে পালন করে ‘বাংলা ব্লকেড’। এটি কোনো হরতাল বা অবরোধ না হলেও সারাদেশে ব্যাপকভাবে পালিত হয়। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ৬ জুলাই কর্মসূচিটি ঘোষণা করে শিক্ষার্থীরা, যার প্রতিপাদ্য ছিল—বৈষম্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।
এই অরাজনৈতিক কর্মসূচি স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পরিণত হয় এক দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলনে। প্রতিনিয়ত আন্দোলনে নতুনত্ব আনায় এবং তা সফলভাবে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে তাদের শক্ত অবস্থান জানান দেয়।
৭ জুলাই বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে শিক্ষার্থীরা মিছিল শুরু করে। মিছিলটি কলাভবন ও ভিসি চত্বর ঘুরে শাহবাগের দিকে অগ্রসর হয়। শাহবাগে পৌঁছালে পুলিশের বাধার মুখে পড়লেও শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যায় এবং মিছিল ছড়িয়ে পড়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল হয়ে বাংলামোটর পর্যন্ত।
এ কর্মসূচির আওতায় শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, সায়েন্সল্যাব, চানখারপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ ঢাকার প্রায় সব প্রধান সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা এদিন অভিভাবক, পেশাজীবী ও সুশীল সমাজকে আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের আহ্বান জানান।
‘বাংলা ব্লকেড’ নামটি দিয়ে শিক্ষার্থীরা বোঝাতে চেয়েছে যে, এটি শুধুমাত্র বাধা দেওয়ার নয়—একটি বৃহৎ সামাজিক বার্তা ও আন্দোলনের রূপান্তর। সমন্বয়কারীদের মতে, প্রচলিত কর্মসূচির ধারা থেকে বের হয়ে সাধারণ মানুষকে সংযুক্ত করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।
রাজধানীর বাইরে, দেশের বিভিন্ন জেলাতেও পালিত হয় এই কর্মসূচি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। একইভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কসহ আরও অনেক সড়ক। এক কথায়, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে, যখন শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজপথে, তখন এক সরকারি অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, লেখাপড়া ফেলে রাস্তায় নামা শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচি যুক্তিসম্মত নয়।
সেদিন রাত ৮টা পর্যন্ত শাহবাগ অবরুদ্ধ রাখে আন্দোলনকারীরা। পরে তারা ঘোষণা দেয়, পরদিন আবারও শাহবাগ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ‘বাংলা ব্লকেড’ চলবে। এরপর তারা রাজপথ ত্যাগ করে।
মূলত, বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির মধ্য দিয়েই শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করে দেয়—২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন কেবল পূর্বের ধারার পুনরাবৃত্তি নয়, বরং একটি নতুন ধাপ। এটি শুধু শিক্ষার্থীদের ঐক্যই দৃঢ় করে না, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যেও তৈরি করে সংহতি ও সমর্থনের সেতুবন্ধন।
মন্তব্য করুন