সরকার ও আ.লীগ ছাড়া করোনাকালে কেউ মানুষের পাশে ছিল না: প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : শনিবার, ২০২০ অক্টোবর ০৩, ০৫:০৬ অপরাহ্ন
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এ দেশে অনেক লোক, অনেক রকমের প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা সাধারণত দরিদ্র লোকদের সহায়তা করে থাকে, তবে এ মহামারি পরিস্থিতিতে তাদের কার্যক্রম দেখা যায়নি। করোনাকালীন দেশের এই খেটে খাওয়া মানুষের পাশে সরকার এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ ছিল না। এটাই বাস্তবতা, সবাই ঘরের মধ্যে ছিল। আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল হওয়ায় মানুষের পাশে ছিল, মানুষের কল্যাণে কাজ করে। আমরা মানুষের পাশে থাকি এবং সর্বদা তাদের পাশে থাকবো। করোনা মহামারিকালে আওয়ামী লীগের ৫২২ নেতা-কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। অন্য কোনো রাজনৈতিক দল এত বড় ত্যাগ স্বীকার করেনি, তারা কেবল মুখে কথাই বলেছে, তাদের মাঠে মানুষের পাশে দেখা যায়নি।’
শনিবার (৩ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে এখন অনেক ভালো ভালো মিডিয়া আছে। যে যার মতো আপন মনের মাধুরি মিশিয়ে বলেই যাচ্ছে, কিন্তু তাদের মাঠে মানুষের পাশে দেখা যায়নি। তারা কেউ আবার বিচার করে; আওয়ামী লীগ কতটুকু করলো, কতটুকু করলো না, কিন্তু তারা আয়নাতে নিজেদের চেহারা দেখে না। এই দেশে গরিব মানুষের সেবা করার অনেক লোক, অনেক রকমের প্রতিষ্ঠান, অনেক কার্যক্রম আমরা দেখি। কিন্তু করোনাকালীন তো তাদের কোনো কার্যক্রম আমরা দেখিনি। তখন সবাই ঘরে, তখন মানুষের পাশে আর কেউ নেই। মানুষের পাশে আওয়ামী লীগ আছে। কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন, আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য সব থেকে বেশি কাজ করে। এই বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতির জন্যই জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। সেই স্বাধীনতার সুফলটা যেন প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছায়। আমরা যেন দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারি, জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষের পাশে আছি, থাকবো। আমি দেশবাসীকে এইটুকু বলতে চাই যে, জনগণের সংগঠন হচ্ছে আওয়ামী লীগ, আর আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে আছে এবং সেটা এবারও এই দুর্যোগ করোনা মহামারির সময় প্রমাণ হয়েছে। এই অবস্থায় যেখানে বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি কমেছে, অনেকে তো মাইনাসে চলে গেছে, তারপরও আমরা কিন্তু ৫ দশমিক ৬ এর কাছাকাছি অর্জন করতে পেরেছি। হয়তো আমরা আরও বেশি করতে পারবো। অর্থ্যাৎ একদিকে দুর্যোগ মোকাবিলা, অপরদিকে আমাদের দেশের অর্থনীতি সচল করা, মানুষের পাশে দাঁড়ানো, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে তাদের উন্নত জীবন দেওয়া—এই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করায় সরকার দেশে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে। কিছু মানুষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে অনেক কথা বলছে...আমি জরুরি ভিত্তিতে তাদের যে নির্দেশনাই দিয়েছি তারা তা করেছে। তারা সঠিকভাবে কাজ করেছে...এ কারণেই আমরা করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে তিনি যখন কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন তখন তাদের সরকারি নিয়মের বাধ্যবাধকতা এড়িয়ে দ্রুত কাজ করতে বলেছেন। কারণ দেশের মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য সেগুলো খুব জরুরি ছিল। আমাদের কাজ করতে হবে, আমাদের বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করতে হবে, আমাদের জনগণকে চিকিত্সা দিতে হবে, আমাদের জনগণের কাছে যেতে হবে, এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জরুরি বিষয়ে সব নিয়ম অনুসরণ করার দরকার নেই। কেউ যদি কারও জন্য কোনো সমস্যায় পড়েন, সেটা আমরা দেখবো।’
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে সরকার জরুরি ভিত্তিতে দুই হাজার চিকিৎসক ও তিন হাজার নার্সের পাশাপাশি কিছু টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিয়েছে। আমি অর্থ ও জনপ্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে একসাথে বসতে বলেছি। এসব চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ান নিয়োগে আমি সিদ্ধান্ত দিয়েছি এবং তাত্ক্ষণিকভাবে কাগজে সাইন করেছি।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশের আরও চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ান দরকার হওয়ায় সরকার এ বিষয়ে কিছু নীতি শিথিল করে। মহামারির শুরুতে যত দ্রুত সম্ভব সরকার জেলা পর্যায় পর্যন্ত হাসপাতালগুলোকে অক্সিজেন সরবরাহ ও আইসিইউ ব্যবস্থাসহ প্রস্তুত করে তুলে।
তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে সহায়তার জন্য সব সরকারি সংস্থা এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে তাদের সমন্বিত আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানান।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের জন্যই জনগণ সহযোগিতা পেয়েছে, যদি অন্য কোনো দল (ক্ষমতায়) থাকত তবে অসংখ্য মানুষ মারা যেত, তারা অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে পড়তো।’
বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমস্যার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার তাদের দুর্ভোগ লাঘবে চেষ্টা করেছে, এমনকি তাদের ফিরিয়ে আনতে বিশেষ বিমান পাঠিয়েছে। তারা এ মাটির সন্তান, আমরা তাদের মানুষ হিসেবে দেখি, আমাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা বিদেশে তাদের প্রণোদনা দিয়েছি।’
তিনি দেশের অর্থনীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন যে সরকার প্রয়োজন থাকা সবাইকে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে।
খাদ্যশষ্য উৎপাদনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার জন্য দেশের কৃষকদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ জন্যই দেশ খাদ্য সংকটে পড়েনি।
ফসল কাটার মৌসুমে কৃষকদের সাহায্যের জন্য ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।