করোনা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বাড়ছে সংশয় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হচ্ছে ইরানে; চীনে ফের অবরুদ্ধ ৫ লাখ মানুষ; করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু ইসরাইলে; ভেন্টিলেটর বানাচ্ছে পাকিস্তান
নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২০২০ Jun ৩০, ০৩:০২ অপরাহ্ন
#
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস সেক্রেটারি এলেক্স আজার বলেছেন, দুই মাস আগের চেয়ে পরিস্থিতি এখন ভিন্ন। সম্পূর্ণ ভিন্ন বাস্তবতা এবং জটিল থেকে জটিলতর হয়ে পড়া অবস্থায় আমেরিকার জন্য করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জানালা বন্ধ হয়ে পড়ছে। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আমেরিকায় সংশয় ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। কারণ এখনো দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। আগামী তিন মাস করোনার ভ্যাকসিনের ব্যাপক পরীক্ষা হবে বলে জানানো হচ্ছে। ভ্যাকসিন আসার পর বিপুলসংখ্যক মানুষ তা না পেলে ভবিষ্যতে কী হবে, এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে স্বাস্থ্যসেবীদের মধ্যে।
এমন পরিস্থিতিতেও নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েই যাচ্ছেন ট্রাম্প। বিভিন্ন স্থানে জনসমাবেশ করছেন। একেবারেই সামাজিক বিধিনিষেধ মানছেন না তিনি। সংক্রমণ রুখতে যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে, সেখানে প্রচারসভায় ভিড় বাড়াতে গাদাগাদি করে লোক বসানো হচ্ছে।
দেশটির কোনো কোনো রাজ্যে হাসপাতালে রেকর্ডসংখ্যক লোকজন করোনার সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে।
শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউসি বলেছেন, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ কার্যকর হলেও তিনি সন্তুষ্ট হবেন। খবর দ্য গার্ডিয়ান, এএফপি, আনাদোলু এজেন্সি, আল জাজিরা, টিবিএস, রয়টার্স, বিবিসি, ডেইলি মেইল, স্কাই নিউজ, দ্য সান, সিএনএন, ওয়ার্ল্ডোমিটারস, গালফ নিউজ, নিউজ ১৮ ও ওয়াশিংটন পোস্টের।
চীনে ফের অবরুদ্ধ ৫ লাখ মানুষ : দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করায় বেইজিংয়ের নিকটবর্তী একটি এলাকা ফের লকডাউন করেছে চীন। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন হেবেই প্রদেশের আনজিন কাউন্টির প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। আনজিন শহরটি পুরোপুরি অবরুদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত থাকবে। মহামারীর মূল সময়টাতে উহানে যেমন কড়া বিধিনিষেধ ছিল, সেই নির্দেশনাগুলোই ফিরিয়ে আনা হয়েছে আনজিনে। এর ফলে, এখন থেকে শহরটিতে বসবাসকারী অত্যাবশ্যক কাজের শ্রমিক ছাড়া কেউ বাইরে যেতে পারবেন না। বাড়ির মাত্র একজন দিনে একবার নিত্যপণ্য কিনতে বাইরে যতে পারবেন। আনজিনে সম্প্রতি ১৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর পরপরই সংক্রমণের বিস্তার রোধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ফের সংক্রমণ শুরুর পর বেইজিং কর্তৃপক্ষ গণহারে করোনা পরীক্ষা করছে। সাম্প্রতিক এই প্রাদুর্ভাবের পর প্রায় এক- তৃতীয়াংশ বাসিন্দার করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চীনের রাজধানী শহরটির এক কর্মকর্তা। জুনের মাঝামাঝি একটি পাইকারি বাজারে শুরু হওয়া প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছে এ পদক্ষেপ।
তুরস্কের তিন এমপি করোনা পজিটিভ : তুরস্কের বিরোধী দলের তিনজন এমপি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ওই তিন এমপি পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য হলেও তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। এক বিবৃতিতে দলটির সংসদীয় দলের উপ-চেয়ারপারসন হাক্কি সারুহান ওলুক ও মেরাল ডানিস বেস্তাস জানান, দলের কার্যালয়ের এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেক নেতাকর্মীর পরীক্ষা করা হয়েছে। দলের সব কর্মী, সদস্য, উপদেষ্টা ও এমপিদের করোনা পরীক্ষা করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক পরীক্ষার পর জানা গেছে, এখন পর্যন্ত তিনজন এমপি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আছেন এবং অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।
মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হচ্ছে ইরানে : মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি রোববার এক বিবৃতিতে বলেছেন যে, আগামী সপ্তাহ থেকেই জনসমাগমে মাস্ক পরা অবশ্যই বাধ্যতামূলক করা হবে। যেসব প্রদেশে ভাইরাসের প্রকোপ বেশি সেখানে নতুন করে আবারো কড়াকড়ি আরোপের নির্দেশনা দেয়া হবে। করোনার প্রকোপ ঠেকাতে ইতোমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কাতারে মাস্ক না পরলে জেল-জরিমানার বিধান আনা হয়েছে।
৫৪ দেশের জন্য সীমান্ত খুলছে ইইউ : করোনা মহামারীতে বন্ধ হয়ে যাওয়া সীমান্ত জুলাইয়ের শুরু থেকে খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বিশ্বের ৫৪টি দেশের নাগরিকরা ইইউর শেনজেন জোনে প্রবেশ করতে পারবেন।
ভেন্টিলেটর বানাচ্ছে পাকিস্তান : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভেন্টিলেটর তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে পাকিস্তান। এক টুইটবার্তায় পাকিস্তানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী জানিয়েছেন, তার দেশ ভেন্টিলেটর উৎপাদন শুরু করেছে। তাদের তৈরি প্রথম ভেন্টিলেটরটি দেশের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার কাছে খুব দ্রুত হস্তান্তর করা হবে। বর্তমানে দেশটিতে ১ হাজার ৫০৩টি ভেন্টিলেটর দিয়ে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। তবে বড় বড় শহরগুলোতে অবস্থিত বিভিন্ন হাসপাতাল এর মধ্যেই অভিযোগ করেছে যে, ভেন্টিলটরের অভাবে তারা রোগীদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ফিরছে করোনার ঢেউ : দক্ষিণ কোরিয়ায় আবারো বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। ফলে, কিছু দিনের মধ্যেই সেখানে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সোমবার কোরিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (কেসিডিসি) জানিয়েছে, রোববার দেশটিতে নতুন করে ৪২ জন করোনারোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৭৫৭ জন। নতুন রোগীদের মধ্যে ৩০ জনই স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত এবং তাদের বেশির ভাগই সিউল ও এর আশপাশের এলাকার। স্থানীয় তিনটি চার্চ থেকেই ওই এলাকায় ফের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। নতুন রোগীদের মধ্যে বাকি ১২ জন বহিরাগত।
মেক্সিকোতে চার সহস্রাধিক করোনা শনাক্ত : মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জারি করা বিধিনিষেধ সোমবার থেকে পর্যায়ক্রমে তুলে নেয়ার কথা রয়েছে। তবে এর এক দিন আগে রোববার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটিতে গত ২৪ঘণ্টায় নতুন করে চার হাজার ৫০ জনের শরীরে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে এ ভাইরাসে ২৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ অব্রাডর সোমবার থেকে পর্যায়ক্রমে বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
নকশাদার মাস্কের চাহিদা তুঙ্গে : করোনাভাইরাস নিয়ে বেঁচে থাকতে অভ্যস্ত হতে শুরু করেছে মানুষ। নতুন এই স্বাভাবিক জীবনে নিত্যসঙ্গী মাস্ক ও গ্লাভস। তাই এই মাস্ককেই মানুষ এখন ফ্যাশনের অঙ্গ করে নিচ্ছে। মাস্কে নানা নকশা করে পরতে পছন্দ করছেন অনেকে। তাতেই চাহিদা বাড়ছে বাহারি ডিজাইনের ফ্যাশনেবল মাস্কের। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ায় এই ফ্যাশন মাস্কের চাহিদা এখন তুঙ্গে। ইন্দোনেশিয়ায় মানুষজন অর্ডার দিয়ে নিজের পছন্দমতো বিভিন্ন নকশার মাস্ক তৈরি করিয়ে নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপড়ে নিজের মুখের ছাপাঙ্কিত মাস্কের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে।
পুরোপুরি সেরে উঠবেন না আক্রান্তরা : বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত লোকজন হয়তো এর প্রভাব থেকে কখনোই পুরোপুরি সেরে উঠতে পারবেন না। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে লেখা এক নিবন্ধে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা: হেলেন স্যালিসবুরি বলেছেন, আপনি যদি আগে এক সপ্তাহে তিনবার পাঁচ কিলোমিটার দৌড়াতেন এখন কয়েক কদম চলার পর শ্বাসকষ্ট অনুভব করছেন। অথবা আপনার যদি টানা কাশি থেকে থাকে এবং কাজে ফিরতে খুব পরিশ্রান্ত বোধ করেন, তাহলে আপনি হয়তো আগের স্বাস্থ্য আর ফিরে পাবেন না। আর এটাই প্রকৃত বাস্তবতা। ক্যালিফোর্নিয়ার লা জোলার স্ক্রিপস রিসার্চ ট্রান্সলেশনাল ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: এরিক টোপোল বলেছেন, আমরা মনে করেছিলাম এটি কেবল শ্বাস কষ্টের একটি ভাইরাস। দেখা গেল এটি অগ্ন্যাশয়ে যাচ্ছে। এটি হার্টে যাচ্ছে। এটি লিভার, মস্তিষ্ক, কিডনি এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে আক্রমণ করছে। যা আমরা শুরুতে উপলব্ধি করতে পারিনি। শিকাগোর নর্থওয়েস্টার্ন মেডিসিনের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: সাদিয়া খান বলেছেন, ইনফ্লুয়েঞ্জার পাশাপাশি যাদের হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে, তারা করোনায় উচ্চঝুঁকিতে রয়েছেন। ফুসফুসের বাইরেও এর জটিলতা ব্যাপক। আক্রান্ত রোগী বয়স্ক হলে কখনো আগের মতো কর্মশক্তিতে ফিরে আসতে পারবেন না।
কলকাতায় ১৪ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি : কলকাতায় করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার মধ্যেও আশার আলো দেখা দিয়েছে। ১৪.৩৯ শতাংশ মানুষের দেহে করোনার অ্যান্টিবডি এরই মধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছে। আইসিএমআরের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। মাসখানেক আগেই কলকাতা ও একাধিক জেলায় বেশ কিছু মানুষের শরীর থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেই নমুনা পরীক্ষা করেই রীতিমতো সন্তোষ প্রকাশ করেছে আইসিএমআর। কলকাতার পাশে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতেও ২.৫ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনা প্রতিরোধের অ্যান্টিবডি মিলেছে। করোনা অ্যান্টিবডি শনাক্তকরণের মাধ্যমে বোঝা যায় কত মানুষ নিজেদের অজান্তেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
করোনা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে জনবহুল দেশগুলো : জনসংখ্যা বেশি এমন দেশগুলোকে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বেশি হিমশিম খেতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীনে এরই মধ্যে দ্বিতীয় মেয়াদে করোনা আঘাত হানার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। রাজধানী বেইজিং ও হুবেই প্রদেশে নতুন করে সংক্রমণ শুরু হয়েছে। ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে দ্রুতগতিতে। শনিবার সেখানে এক দিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়; ২০ হাজার ১৩১ জন। যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে এবং তা প্রথম আঘাতের চেয়ে ভয়াবহ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। বিশ্বের চতুর্থ জনবহুল দেশ ইন্দোনেশিয়ায় শনিবার সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়; এক হাজার ৩৮৫ জন। পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, ব্রাজিল, রাশিয়া ও মেক্সিকোর পরিস্থিতিও এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
ইসরাইলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু : ইসরাইলে দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউলি এডেলস্টেইন। ইসরাইলের জনগণ করোনাভাইরাসকে গুরুত্বের সাথে না নেয়ায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সবাইকে সতর্ক করে জানিয়েছেন, ইসরাইলে ইতোমধ্যে দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ শুরু হয়েছে। কারণ, দেশটিতে নতুন করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। যেটা কয়েক সপ্তাহ আগেও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল। বর্তমানে দৈনিক ৫০০ জনের অধিক করে আক্রান্ত হচ্ছে ইসরাইলে। ইসরাইলে এ পর্যন্ত ২৩ হাজার ৭৫৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৩১৮ জন। সেরে উঠেছেন ১৭ হাজার ৭৪ জন।
লাইটার থেকেও ছড়াচ্ছে করোনা : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ‘ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সাধারণ মানুষের তুলনায় অনেক বেশি। আর করোনাভাইরাস সংক্রমণ হলে অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীর অবস্থা অত্যন্ত জটিল হতে পারে।’ অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অঙ্গরাজ্যে ভিক্টোরিয়ায় মহামারী করোনাভাইরাসের এই নতুন সংক্রমণ শুরু হয়েছে। সিগারেটের লাইটার থেকে সেখানে করোনা ছড়াচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সিগারেট জ্বালাতে গিয়ে একই লাইটার ব্যবহার বা বিনিময় থেকে নতুন এই সংক্রমণ শুরু হয়েছে। মেলবোর্নের একটি হোটেলের স্টাফরা এই সিগারেটের লাইটার নিজেদের মধ্যে বিনিময় করেন। রোববার ভিক্টোরিয়ায় নতুন করে ৪৯ জন রোগী পাওয়া গেছে, যা গত ২ মাসে সর্বোচ্চ। অস্ট্রেলিয়ায় এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৭ হাজারের কিছু বেশি। এর মধ্যে মারা গেছেন ১০৪ জন।
ইতালিতে ২৪ ঘণ্টায় ২২ জনের মৃত্যু : করোনাভাইরাসের নিয়ন্ত্রণহীন সময় পেরিয়ে এসেছে ইউরোপের দেশ ইতালি। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে নতুন করে ১৭৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময় মারা গেছেন ২২ জন আক্রান্ত। করোনার সংক্রমণ কমে আসতে থাকায় মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে লকডাউন শিথিল করে ইতালি। গত ৩ জুন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো থেকে পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। তবে দেশটির উত্তরাঞ্চলে নতুন করে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটছে। ইতালিতে এ পর্যন্ত ২ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন ৩৪ হাজার ৭৩৮ জন।
স্প্রে করা ভ্যাকসিন করোনায় বেশি কার্যকর : যুক্তরাজ্যের শীর্ষ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিআসথ্রাজেনিকার হাত ধরে তৈরির পথে অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন। অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিনটি ইনজেকশনের মাধ্যমে মানবদেহে প্রয়োগ করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনও তৈরি করেছে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করার একটি ভ্যাকসিন। দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় ইনজেকশনধর্মী ভ্যাকসিন তৈরি করলেও উভয় প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ভ্যাকসিনটি ইনজেকশনের চেয়ে ইনহেলার কিংবা নাকে স্প্রে করলেই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে বেশি কার্যকর হবে। ইনহেলার কিংবা নাকে স্প্রে করা হলে ভ্যাকসিনটি সরাসরি ফুসফুসে পৌঁছে মানুষকে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেবে। করোনাভাইরাস যেহেতু ফুসফুসের ওপর বেশি আক্রমণ করে, তাই সেখানেই এর যুদ্ধটা বেশি লড়তে হবে।
হিউম্যান ট্রায়ালের পথে থাইল্যান্ডের ভ্যাকসিন : করোনার প্রতিষেধক নিয়ে আশার কথা জানিয়েছে থাইল্যান্ড। থাইল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা জানান, প্রথমে ইঁদুরের ওপর, পরে বাদুড়ের ওপর-দুই ক্ষেত্রেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে করোনা প্রতিষেধকে আশানুরূপ ফল মিলেছে। শুধু তাই নয়, কবে থেকে এই ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হতে পারে, সে বিষয়ে ইঙ্গিতও দিয়েছেন তারা। ভ্যাকসিনের গবেষণা দলের প্রধান চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক কিয়াথ রুক্সরাংথাম জানান, অক্টোবর মাসের শুরুতেই থাইল্যান্ডের বিজ্ঞানীদের তৈরি করোনা প্রতিষেধকের হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হতে পারে।
হ্যান্ড স্যানিটাইজারে শিশুর ত্বকের ক্ষতি : হাতের কাছে পানি না থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ভালো করে জীবাণুমুক্ত করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ কারণে করোনার জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। কারণ রাসায়নিক বা অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার শিশুদের কোমল ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজারে ৬০ শতাংশ বা তারও বেশি পরিমাণে অ্যালকোহল থাকে। বারবার হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাতে মাখলে ত্বক তার স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারিয়ে রুক্ষ হয়ে যায়। ট্রাইক্লোসেন উপাদানটি শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়ার জন্য দায়ী। এ ক্ষেত্রে নিম পাতা, অ্যালোয়ভেরার মতো প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি স্যানিটাইজারের ব্যবহার করা যেতে পারে। সাবান দিয়েও শিশুদের ত্বক জীবাণুমুক্ত করা যেতে পারে।
টেক্সাসে বিপজ্জনক মোড় নিয়েছে করোনা : যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট বলেছেন, গত কয়েক সপ্তাহে তার রাজ্যে ‘খুব দ্রুত এবং বিপজ্জনক মোড় নিয়েছে’ করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। করোনাভাইরাসের কারণে টেক্সাসে নির্বাচনী প্রচারণার অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন পেন্স। যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউন তুলে দেয়ার ক্ষেত্রে যে রাজ্যগুলো এগিয়ে ছিল টেক্সাস সেগুলোর একটি ছিল। কিন্তু এখন সেখানকার গভর্নর অ্যাবোট রাজ্যটির সব বার বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া রেস্টুরেন্টে বসার ক্ষেত্রে ক্রেতা কমানোরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এমন এক সময় তিনি এই নির্দেশ দিলেন যখন টেক্সাসে ক্রমেই বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। সেখানে এক দিনে আক্রান্তে ২ হাজার থেকে এক লাফে ৫ হাজার পেরিয়ে গেছে।
করোনা নিয়ে শঙ্কায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা : সারা বিশ্বে এক কোটি ছাড়িয়েছে নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা। বিশ্বের ১ মিলিয়ন বা দশ লাখ কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হতে সময় লেগেছে তিন মাস। কিন্তু শেষ ১০ লাখ রোগী মাত্র আট দিনে পাওয়া গেছে। এমতাবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এবার নতুন ভয়াবহ একটি পর্যায়ে ঢুকছে বিশ্ব। সংস্থাটির দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের এক কর্মকর্তা বলছেন, ‘যে সংখ্যা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, তা হলো শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা। কিন্তু, এটা আসলে পানির ওপর ভেসে থাকা বরফের চাঁইয়ের মতো। আমরা কেউ জানি না, আসল সংখ্যা কত হতে পারে।’
করোনায় ১২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ক্ষতি : করোনা মহামারীতে এখন পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনীতির অন্তত ১২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার আইটিসি। আইটিসি বলছে, ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যের পরিমাণ কমেছে। ২০২০ সালে এ সঙ্কট আরো প্রকট হয়েছে। কোভিড নাইনটিন সংক্রমণের তুঙ্গে থাকা প্রায় সব দেশের অর্থনীতির বেহাল দশা।
করোনা চিকিৎসায় প্রাচীন পদ্ধতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে চীন : গোটা বিশ্বে যখন করোনার টিকা আবিষ্কারে প্রতিযোগিতা চলছে তখন করোনা চিকিৎসার উপায় হিসেবে ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন (টিসিএম) বা প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে চীন। দেশটির সরকার দাবি করেছে, চীনে কোভিড-১৯ আক্রান্ত শতকরা ৯২ শতাংশের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন পদ্ধতি কোনো না কোনোভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। টিসিএম হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতি। ভেষজ উপাদান থেকে শুরু করে আকুপাংচার সব ধরনের চিকিৎসাই এর অন্তর্ভুক্ত। প্রজন্মের পর প্রজন্মে ধরে টিসিএম পদ্ধতি চীনে জনপ্রিয়।
লকডাউনে ফিলিপাইনে জন্ম নেবে লাখো শিশু : লকডাউনের কারণে জন্মনিরোধক-সঙ্কটে আগামী বছর ফিলিপাইনে জন্ম নেবে প্রায় ২ লাখ ১৪ হাজার অতিরিক্ত শিশু। লকডাউনের কারণে দেশটিতে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। দেশটির নানা এলাকায় জন্মনিরোধক ওষুধের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব দ্য ফিলিপাইনস পপুলেশন ইনস্টিটিউট ও ইউএনএফপিএ বলছে, করোনা মহামারীর কারণে নারীরা অপরিকল্পিতভাবে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন। এ কারণে আগামী বছর স্বাভাবিক শিশু জন্মের পাশাপাশি প্রায় ২ লাখ ১৪ হাজার অতিরিক্ত শিশুর জন্ম হবে ফিলিপাইনে।
ভারতে আক্রান্ত সাড়ে ৫ লাখ, মৃত্যু সাড়ে ১৬ হাজার : ভারতে করোনার দাপট বেড়ে চলেছে। এরই মধ্যে সেখানে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখ। দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন সাড়ে ১৬ হাজার মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটির ১৯ হাজার ৬২০ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময় মৃত্যু হয়েছে ৩৮৪ জনের।
মন্তব্য করুন