আগামীতে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে জনগণ আরও লাভবান হবে, তাদের ভাগ্যের উন্নতি হবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার (২৩ জুন) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে জনগণ যে লাভবান হয়, জনগণের যে ভাগ্য পরিবর্তন হয় সেটা প্রমাণিত সত্য। ’
বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘একটা বিরাট পরিবর্তন বাংলাদেশে আমরা নিয়ে এসেছি। আজকের বাংলাদেশের মানুষ নুন ভাত থেকে এখন মাংস ভাত চায়। অন্তত এইটুকু তো উন্নতি হয়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছে জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য এবং জনগণের সেবা করা, এটাই আওয়ামী লীগের কাজ। ’
বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই কিন্তু নৌকা মার্কায় জনগণ ভোট দিয়েছে বলেই, আজকে মানুষের পরিবর্তন এসেছে। ’
তিনি বলেন, ‘আজকে যে উন্নয়ন, যে পরিবর্তন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসলে কোনোদিনই হতো না। আওয়ামী লীগ থাকলেই মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। ’
বিএনপি আমলের চেয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশ কতটা এগিয়েছে তার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের যে মৌলিক চাহিদা, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, প্রতিটি মৌলিক চাহিদা আমরা পূরণ করে যাচ্ছি। জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ’
মানুষের দৌরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে দিচ্ছি, এমনকি ইনসুলিনও এখন বিনামূল্যে দেওয়া শুরু করেছি। ’
সরকারের বিনামূল্যে ঘর ও বাড়ি দেওয়ার কর্মসূচি এবং আর মাত্র ৩০ হাজার পরিবারকে ঘর দিলে সবার জন্য ঘর নিশ্চিত হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ বাংলাদেশে ভূমিহীন থাকবে না, ঠিকানা বিহীন থাকবে না। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। ’
তিনি বলেন, ‘কোনো মানুষ অস্বাস্থ্যকরভাবে থাকবে না। সবাইকে আমরা সুন্দরভাবে ঘর-বাড়ি করে সুন্দরভাবে বাঁচার ব্যবস্থা করে দিব। এটাই হবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের প্রতিজ্ঞা। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে অনেক দূর আমরা এগিয়ে গেছি। ২৬ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাব। ’
তিনি বলেন, ‘আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হবে। স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে আমাদের আরও সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। ’
সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশটাকে নিয়ে যেন আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। আমি জানি অনেক চক্রান্ত আছে, ষড়যন্ত্র আছে। ’
করোনার প্রভাব এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটু দুঃসময় যাচ্ছে আমি জানি। মানুষের যে কষ্ট, সেই কষ্ট লাঘবের জন্য আমাদের প্রাণপণ চেষ্টা হচ্ছে। ’
বিত্তবানদের দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিভিন্ন অর্জনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে আমরা সরকারে আবার আসতে পারিনি। সেটাও আপনারা জানেন যে আমার ওপর প্রচণ্ড চাপ ছিল। যে আমাদের গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আমি বলেছিলাম, এই গ্যাস জনগণের। আর কতটুকু আছে জানি না। কাজে আমার পক্ষে বাংলাদেশের সম্পদ, মানুষের সম্পদ, শুধু ক্ষমতার লোভে তা বিক্রি করে আমি ক্ষমতায় থাকব সেই বাপের মেয়ে আমি না। ’
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতার জন্য গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা চাইনি, কিন্তু মুচলেকা দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। একই জায়গায় বসেই সে ঘটনা অনেক বার বলেছি। ’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন ও শফিউল আলম নাদেল, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় সদস্য বেগম আখতার জাহান, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি ও ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি বজলুর রহমান।
সঞ্চালনা করেন, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুল আওয়াল শামীম।
মন্তব্য করুন