সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা, দেশের মুষ্টিমেয় স্বার্থান্বেষী মহলের কিছু সংখ্যক লোক ব্যতীত প্রত্যেক শ্রেণি পেশার মানুষ সাংবাদিকতার পেশায় নিয়োজিত গণমাধ্যম কর্মীদেরকে সম্মানের চোখে দেখে। তবে অতীতের চেয়ে বর্তমানে বিশাল পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
কারণ হিসাবে বলা যায়, এখনকার কতিপয় গণমাধ্যমকর্মীরা দেশ ও জাতির স্বার্থে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশের পরিবর্তে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে সমাজ প্রতিনিধি, প্রশাসন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের তাবেদারিতে সাংবাদিক পরিচয়ে কতিপয় চাটুকারদের বিরাজমান নোংরামি অন্যতম কারণ। সাংবাদিকতার মতো এমহান পেশাটির প্রতি অতীতের ভক্তি, সম্মান ও শ্রদ্ধার পরিবর্তে এখম মফস্বল পর্যায়ে দিন দিন আস্থা হারাচ্ছে।
এছাড়াও বর্তমানে স্যোসাল মিডিয়ার যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গণমাধ্যম কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরস্পর বিরোধী কাঁদা ছুড়াছুড়ি এবং অনৈক্যতা এই পেশায় বিস্তর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
আর দেশ ও জনস্বার্থে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের পরিবর্তে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের কূমানসে সত্য ও প্রকৃত তথ্য- উপাত্তকে গোপন করে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের মতো হীনমনতার চরিতার্থ করা, আত্মীয় করণ, পক্ষপাত অবলম্বন, অবৈধ উপার্জনের দূর্বল মানসিকতা, সাংবাদিকতার নামে ফেইসবুক পেইজ, অনলাইন পেইজ খোলে তথ্য বিহীন ও মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়ে দিয়ে ভালো মানুষ গুলোর সম্মানহানি করা, সমাজের অসহায় ও দুর্বল শ্রেণির মানুষ গুলোকে ভীতি প্রদর্শন করা, সাংবাদিকতার পরিচয়ে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, দূর্নীতি, অনিয়ম, মাদক বাণিজ্য নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়া, সংবাদপত্র ও সাংবাদিতার পেশাকে দারুণ ভাবে কলুষিত করছে।
বিশেষ করে মফস্বল সাংবাদিকতা এখন প্রতিটি শ্রেণির পেশার মানুষের কাছে অনেকটাই ঘৃণ্য পেশায় পরিণত হয়েছে। এর বিশেষ কিছু কারণও রয়েছে। যেমন- যে কোনো ঘটনার বিষয়ে ৫০০-১০০০ টাকার বিনিময়ে পক্ষপাত অবলম্বন করা, তথ্য উপাত্ত অযাচিত ভাবে হুট করে একতরফা নিউজ প্রকাশ করা, নিউজ প্রকাশের পর একই ব্যক্তি প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ হাসিল করতে ভুক্তভোগীর পেছনে ঘুরঘুর করা, সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে ১পক্ষ -২য় পক্ষ কিংবা উভয় পক্ষের বক্তব্য গ্রহণ করার পরিবর্তে একতরফা বক্তব্যের উপর নির্ভর করে রিপোর্ট সংগ্রহ ও সংবাদ প্রকাশ করা, আত্মপক্ষকের মতামত যাচাই না করাসহ বহুবিধ কারণ থাকতে পারে।
আর উপরোক্ত ঘটনা উদ্ভবের মুল কারণ হিসেবে বলা যায়, অনিবন্ধিত সংবাদপত্র, অনলাইন পেইজ, ইউটিউব চ্যানেলসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রের নামে মফস্বল পর্যায়ে অদক্ষ, অক্ষর জ্ঞানহীন, অযোগ্য, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস, মাদকাসক্ত, দূর্নীতিবাজ, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার নীতিমালা সংক্রান্তে জ্ঞানহীন কতিপয় অসাধু প্রক্রিয়ার লোককে এক-দুই হাজার টাকার বিনিময়ে পত্রিকা, অনলাইন পেইজ, ইউটিউব চ্যানেলসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিনিধি নিয়োগের নামে উক্ত ব্যক্তিদের গলায় প্রেসকার্ড ঝুলিয়ে দেয়াই অন্যতম কারণ।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র প্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের নিয়ে বাঁশখালীতে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর মেজরের এক মতবিনিময় সভায় ছাত্র প্রতিনিধি, বিভিন্ন চেয়ারম্যান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ উপস্থিত জন প্রতিনিধিদের অনেকেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সেনাবাহিনী মেজরের কাছে গণমাধ্যম কর্মী পরিচয়ে কতিপয় চাঁদাবাজদের অপকর্মের বিষয়ে অভিযোগ তুলে ধরতে দেখা গেছে। কথিত অসাধু শ্রেণির লোকের অপকর্মের
এধরণের সমস্যা থেকে উত্তরণ ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মান সমুন্নত রাখতে মফস্বল পর্যায়ে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য নাম-পরিচয়হীন ও অনেকটাই মৃত্যু শয্যায় আইসিইউতে থাকা সংবাদপত্রের সম্পাদক, প্রকাশক, উপ-সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক পরিচয়ে প্রেসকার্ড বাণিজ্যকারী অসাধু ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর এজন্যে বিভিন্ন প্রিন্ট'স, ইলেক্ট্রনিকসহ মুলধারার সংবাদপত্রের সম্পাদক, উপ-সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক, প্রেস কাউন্সিল, সাংবাদিক সংস্থা, সংবাদ সংস্থা প্রধান ও সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং সংবাদ ও সাংবাদিকতার নীতিমালা সংক্রান্তে জ্ঞানহীন ব্যক্তিদের গণমাধ্যমে নিয়োগ প্রবণতা রোধ করতে প্রয়োজনে সরকার এবং প্রশাসনের সহযোগিতা নিতে হবে।
যেহেতু এধরণের অসাধু শ্রেণির কতিপয় স্বার্থান্বেষী, উদ্দেশ্য প্রবণ কুচক্রী মহলের কারণে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের মানদণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আর একতরফা ও অযাচিত সংবাদ প্রকাশের ফলে একদিকে অনেক নিরহ, নিরাপরাধ ও সাধারণ মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়ে নানা ভাবে হেনস্তা ও হয়রানির শিকার হচ্ছে অপরদিকে প্রকৃত অপরাধীরা অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়।
বস্তুনিষ্ঠ সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতাকে দেশ ও জাতির চতুর্থ স্তম্ভ, জাতির বিবেক এবং জাতির দর্পন হিসেবে বিবেচিত হলেও বর্তমানে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার মানদণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠা কিংবা গ্রহণ যোগ্যতা হারানোর কারণটাই বা কি? তা খোঁজে বের করতে হবে। গলায় প্রেসকার্ড ঝুলিয়ে সাংবাদিকতার পরিচয়ে মফস্বল পর্যায়ে এক শ্রেণির কিছু মানুষ প্রশাসনের দালালি, চাঁদাবাজি, মাদক বাণিজ্য, বিচার বাণিজ্য ও মামলা বাণিজ্য, মাদকদ্রব্য বানিজ্য ও দূর্নীতিবাজদের দালালি করাই যেনো এখন সাংবাদিকতা। যাহা সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার মানদন্ডকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়।
বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও সাংবাদিকতার নীতিমালা সংক্রান্তে অভিজ্ঞ ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োগ দেয়া হলেও দেশের ক্লান্তিকর পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে রাজনৈতিক পরিচয়ে কতিপয় উদ্দেশ্য প্রবণ ও কুচক্রী মহল এখন সাংবাদিক ও সংবাদপত্রকে নিশানা করতে উঠেপড়ে লেগেছে। শীর্ষ পর্যায়ে থেকে মফস্বল পর্যায়ে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গে বিভাজন ও অনৈক্যের ফলে এধরণের দুঃসাহস দেখাচ্ছে বলে ধারণা করা যায়। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের জন্যে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, বস্তুনিষ্ঠতা, সক্রিয়তা যেমন প্রয়োজন তেমনি ভাবে সংবাদপত্র সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ইউনিটি থাকাও জরুরি।
উপরোক্ত সমস্যা সমাধানের জন্য, গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিরাজমান অনৈক্যের পরিবর্তে একাত্মতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা,জবাবদিহিতা, বস্তুনিষ্ঠতা, সক্রিয়তা বাড়ানোর পাশাপাশি যত্রতত্র প্রতিনিধি নিয়োগের নামে কার্ড বাণিজ্য, প্রশাসন, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক দলের তাবেদারি থেকে গণমাধ্যমকে পুনঃ উদ্ধার করতে হবে এবং গণমাধ্যম পরিচয়ে চাটুকার শ্রেণির লোকজনকে চিহ্নিত করতে হবে। এজন্যে মুলধারার গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গকে উদ্যোগ নিতে হবে।