কনকনে শীতে চরম অযত্ন-অবহেলায় দিন কাটাচ্ছে পথশিশুরা। নানা কারণে স্বাভাবিক জীবন থেকে ছিটকে পড়া এসব শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তব্য। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ, যেখানে অধিকাংশ পরিবার মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত বা দরিদ্র। ফলে এই দেশের শিশুদের একটি বড় অংশ অবহেলিত, নিষ্পেষিত ও নিপীড়িত।
পথশিশু হওয়ার পেছনে পারিবারিক কলহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, পিতৃপরিচয়হীনভাবে জন্ম নেওয়া, পিতামাতার অকালমৃত্যু, মাদকাসক্তি, মানসিক ভারসাম্যহীন নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা—এসব বিভিন্ন কারণ কাজ করে। এর ফলে অনেক শিশুর জীবন অযত্ন ও অবহেলায় ধ্বংস হচ্ছে। তারা দিনের পর দিন ফুটপাত, রেললাইন, ফ্লাইওভারের নিচে, খালের পাড়ে কিংবা রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে। শীতের প্রকোপে শীতবস্ত্রহীন অবস্থায় তাদের অসহায়ত্ব আরও বেড়ে যায়।
পেটের ক্ষুধা মেটাতে এই শিশুরা কেউ ভিক্ষাবৃত্তি, কেউ শ্রমিকের কাজ, আবার কেউ চুরি বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় অসাধু ব্যক্তিরা তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নানা অপকর্মে ব্যবহার করে। এতে একদিকে শিশুদের জীবন ধ্বংস হচ্ছে, অন্যদিকে সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বাড়ছে নানা বিপদ।
রাজনৈতিক ও অসৎ উদ্দেশ্যে এই শিশুরা কখনো মাদক, বোমাবাজি, কিংবা খুনের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এ থেকেই কিশোর গ্যাংয়ের জন্ম হয়, যা সমাজের শান্তি বিনষ্ট করে।
তবুও এই শিশুদের জীবন বদলানোর সম্ভাবনা রয়েছে। চা-বিক্রেতা থেকে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া, রিকশাচালক থেকে বিসিএস ক্যাডার হয়ে ওঠার মতো দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে রয়েছে। কিন্তু এ সম্ভাবনা নষ্ট হচ্ছে অযত্নে-অবহেলায়।
পথশিশুদের পুনর্বাসনে করণীয়:
১. তাদের খাদ্য ও পোশাকের চাহিদা পূরণে উদ্যোগ নেওয়া।
২. শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
৩. চিকিৎসা, বাসস্থান ও খেলাধুলার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা।
৪. অবিবাহিত নারী-পুরুষের অনৈতিক যৌনমিলন, বাল্যবিবাহ, যৌতুক ও বিবাহবিচ্ছেদ রোধে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।
৫. মানসিক ভারসাম্যহীন ও মাদকাসক্তদের জন্য পুনর্বাসন ব্যবস্থা।
সমাজ ও রাষ্ট্রের সমন্বিত উদ্যোগে পথশিশুদের জন্য একটি উন্নত, সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাও অত্যন্ত জরুরি।